বঙ্গ প্ল্যাটফর্ম: একটি ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক বিশ্লেষণ
'বঙ্গ' শব্দটি বাংলার একটি প্রাচীন নাম, যার উৎপত্তি ও ভৌগোলিক সীমা নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। ঐতরেয় আরণ্যক, বৌধায়ন ধর্মসূত্র, পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত, অর্থশাস্ত্র, মহানিদ্দেশ, মিলিন্দপনহো, রঘুবংশ, জৈন উপাঙ্গ পন্যবণা (প্রজ্ঞাপনা), মহাবংশ, দশকুমারচরিত, শক্তিসঙ্গমতন্ত্র, কামসূত্র, সেন যুগের লিপি, কমৌলি তাম্রশাসন, বিশ্বরূপসেনের সাহিত্য পরিষদ তাম্রশাসন, চন্দ্র তাম্রশাসন, বৃহৎসংহিতা এবং ষোল শতকের দিগ্বিজয় প্রকাশ - এসব গ্রন্থ ও ঐতিহাসিক উৎসে বঙ্গের উল্লেখ রয়েছে বিভিন্ন আকারে।
প্রাচীন যুগে বঙ্গ ছিল একটি ভৌগোলিক ইউনিট, যা বর্তমান বাংলাদেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাংশ এবং সম্ভবত পশ্চিম বাংলার দক্ষিণ অংশ জুড়ে ছিল। গঙ্গার দুই প্রধান ধারা (ভাগীরথী থেকে পদ্মা-মেঘনা) অন্তর্বর্তী এলাকা ছিল এর মূল কেন্দ্র। বঙ্গের নামকরণ জাতিগত উৎপত্তির উপর ভিত্তি করে হয়েছে বলে মনে করা হয়। ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে এর সীমানা পরিবর্তিত হয়েছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে বঙ্গের উৎকৃষ্ট মানের সুতি বস্ত্র উৎপাদনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন গ্রিক ও ল্যাটিন লেখকগণ এ অঞ্চলকে গঙ্গারিডাই বলে অভিহিত করেছেন।
মুসলিম শাসনের প্রথম দিকে 'বং' নামে পরিচিত বঙ্গ, চৌদ্দ শতকে সমগ্র বাংলা 'বাঙ্গালাহ' নামে পরিচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই নামে পরিচিত ছিল। আবদুল মমিন চৌধুরী বঙ্গের ইতিহাস ও ভৌগোলিক পরিচয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।
বঙ্গের বিভিন্ন ভৌগোলিক অংশের উল্লেখ পাওয়া যায় বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিলপত্রে। যেমন, 'বিক্রমপুরভাগ', 'নাব্যভাগ' (বৃহত্তর ঢাকা, ফরিদপুর ও বরিশাল এলাকা), 'অনুত্তর বঙ্গ' অথবা দক্ষিণ বঙ্গ, 'বঙ্গাল-বড়াভূ' (বৃহত্তর বরিশাল), 'উপবঙ্গ' (যশোর ও তৎসংলগ্ন সুন্দরবন অঞ্চল)। এই ভৌগোলিক বিভাগ গুলি বঙ্গের সময়ের সাথে সাথে বিকাশ এবং পরিবর্তনের ইঙ্গিত করে।
- *শাশ্বত বঙ্গ ও বঙ্গের ঐতিহ্য:**
কাজী আবদুল ওদুদের 'শাশ্বত বঙ্গ' গ্রন্থটি বাংলা ভাষা ও সাহিত্য এবং বাঙালির সাংস্কৃতিক ইতিহাসের উপর গুরুত্বপূর্ণ লেখা। এটি বাংলার নবজাগরণ, হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক, রামমোহন রায়, ব্রাহ্মসমাজ, ইয়ংবেঙ্গল, তত্ত্ববোধিনী সভা, বিভিন্ন সমাজ সংস্কারকদের চিন্তাধারা, এবং বাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক ঐতিহ্যের উপর আলোকপাত করে। গ্রন্থটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, বেগম রোকেয়া, কাজী নজরুল ইসলাম, মাইকেল মধুসূদন দত্ত প্রমুখের কর্ম ও চিন্তাভাবনার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এই গ্রন্থটি বঙ্গের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক প্রকাশ করে।