ফৈজাবাদ: ঐতিহাসিক গৌরব ও বর্তমান পরিচয়
উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যা জেলার ফৈজাবাদ শহরটি ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। একসময় অবধ রাজ্যের রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল এই শহরটি। ১৭৩০ সালে সাদাত খানের শিকারের আড্ডা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত এই শহর পরবর্তীতে সফদর জংয়ের আমলে 'ফৈজাবাদ' নামে পরিচিতি পায়। তৃতীয় নবাব, শুজাউদ্দৌলার অধীনে ফৈজাবাদ অবধ রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পরিণত হয়। ১৭৬৪ সালে বক্সারের যুদ্ধের পর শুজাউদ্দৌলা ফৈজাবাদে তার বাসস্থান স্থাপন করেন এবং শহরটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করেন। ১৭৭৫ সালে আসফউদ্দৌলা লখনৌতে রাজধানী স্থানান্তরিত করার পর ফৈজাবাদের গুরুত্ব কিছুটা হ্রাস পায়, তবুও শহরটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব অক্ষুন্ন থাকে।
ফৈজাবাদে অবস্থিত বহু বেগমের সমাধি, গুলাব বাড়ি, মোতি মহল সহ নানা স্থাপত্য ঐতিহ্যের সাক্ষী। ১৮৫৭ সালের সিপাহি বিদ্রোহেও ফৈজাবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। মুন্সি মোহম্মদ ফয়েজ বখশ রচিত 'তারিখে ফরাহবখশ' গ্রন্থ ফৈজাবাদের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ধারণ করে। এই শহরের সাথে অশফাকউল্লা খানের নামও জড়িত, যিনি ১৯২৭ সালে কাকোড়ি ট্রেন ডাকাতির ঘটনায় ফৈজাবাদ জেলে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
২০১১ সালের লোকগণনার তথ্য অনুযায়ী ফৈজাবাদ পৌরসভার জনসংখ্যা ১৪৪,৯২৪। শহরটির জলবায়ু উষ্ণ ও আর্দ্র, বর্ষার সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ফৈজাবাদ জাতীয় সড়ক ২৭ এর উপর অবস্থিত এবং লখনউ, কানপুর, বারানসী, প্রয়াগরাজ এবং গোরখপুরের সাথে সুসংযুক্ত। অযোধ্যা ক্যান্টনমেন্ট রেলওয়ে স্টেশন এবং অযোধ্যা জংশন রেলওয়ে স্টেশন ফৈজাবাদকে ভারতের বিভিন্ন শহরের সাথে যুক্ত করে। ফৈজাবাদের নিকটে অযোধ্যা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, লখনউ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, প্রয়াগরাজ বিমানবন্দর এবং বারানসী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অবস্থিত।
ফৈজাবাদ শুধুমাত্র ঐতিহাসিক গুরুত্ব নয়, বর্তমানেও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর। শহরটির অর্থনীতি কৃষিকর্ম, ব্যবসা, পর্যটন ইত্যাদির উপর নির্ভরশীল। ২০১৮ সালে ফৈজাবাদ জেলার নাম পরিবর্তন করে অযোধ্যা করা হয়।