প্লাস্টিক বর্জ্য

প্লাস্টিক দূষণ: একটি ভয়াবহ বাস্তবতা

প্লাস্টিক, আধুনিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হলেও, এর দূষণের প্রভাব পরিবেশ ও মানবজীবনে বিধ্বংসী। প্লাস্টিকের অপচনশীল স্বভাব, অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অসচেতনতা মিলে এটি একটি বিশ্বব্যাপী পরিবেশগত সংকটে পরিণত হয়েছে।

  • *প্লাস্টিক দূষণের প্রকৃতি:**

প্লাস্টিক দূষণকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়: মাইক্রোপ্লাস্টিক (৫ মিলিমিটারের কম), মেসোপ্লাস্টিক (৫ মিলিমিটার থেকে ২৫ মিলিমিটার) এবং ম্যাক্রোপ্লাস্টিক (২৫ মিলিমিটারের বেশি)। এই প্লাস্টিক কণাগুলি জল, মাটি, বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পানিতে ভেসে থাকা প্লাস্টিকের পরিমাণ বিশাল; একটা পরিসংখ্যান অনুসারে, সমুদ্রে ৫ ট্রিলিয়নের বেশি প্লাস্টিকের টুকরো ভাসছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত এক গবেষণায় প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে।

  • *প্রভাব:**

প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব জীববৈচিত্র্যের উপর ভয়াবহ। সামুদ্রিক প্রাণী, বিশেষ করে সামুদ্রিক কচ্ছপ, তিমি, পাখি প্লাস্টিক গিলে মারা যায়। ২০০৪ সালে যুক্তরাজ্যের প্লাইমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড থম্পসন তার গবেষণায় ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, এন্টার্কটিকা অঞ্চলের সাগরের জলে প্রচুর পরিমাণে মাইক্রোবর্জ্য খুঁজে পেয়েছিলেন। প্লাস্টিক কণাগুলি খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করে মানবদেহেও প্রবেশ করতে পারে, যা বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে। প্লাস্টিক থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, যেমন বিসফেনল-এ (BPA), মানবদেহে হরমোনাল ব্যালেন্স নষ্ট করে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

  • *উৎস:**

প্লাস্টিক দূষণের উৎস হচ্ছে একক ব্যবহারের প্লাস্টিক সামগ্রী, যেমন প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল, প্যাকেজিং সামগ্রী। শুধুমাত্র আমেরিকাতে প্রতিবছর ৫০ লক্ষ টন প্লাস্টিক পণ্য ব্যবহৃত হয়। এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৪ শতাংশ পুনঃচক্রায়ন হয়ে থাকে। প্লাস্টিকের সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব, পুনঃচক্রায়ণের অপ্রতুলতা, এবং প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ফেলে দেওয়া এর প্রধান কারণ।

  • *প্রতিকার:**

প্লাস্টিক দূষণের প্রতিকার জন্য জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে থাকতে পারে:

  • প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনা,
  • পুনঃচক্রায়ণের ব্যবস্থা উন্নত করা,
  • বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিকের ব্যবহার বৃদ্ধি করা,
  • সচেতনতা বৃদ্ধি,
  • কঠোর আইন প্রয়োগ।

ভারত সরকারের খাবার জল ও স্বাস্থ্যব্যবস্থা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। থিরুভানান্তাপুরামে অনুষ্ঠিত ২০১৫ জাতীয় ক্রীড়ায় 'শূন্য বর্জ্য' ক্রীড়াস্থানের লক্ষ্যে প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার ও মহাসাগর রক্ষার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। বিশ্বের অন্যান্য দেশও প্লাস্টিক দূষণ কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।

প্লাস্টিক দূষণ একটি গুরুতর পরিবেশগত সমস্যা, যার প্রতিকারের জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য।

মূল তথ্যাবলী:

  • প্লাস্টিক দূষণ পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি
  • মাইক্রো, মেসো ও ম্যাক্রোপ্লাস্টিক - তিন ধরণের দূষণ
  • সামুদ্রিক প্রাণীর উপর ভয়াবহ প্রভাব
  • মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত
  • পুনঃচক্রায়ন, বায়োডিগ্রেডেবল প্লাস্টিক ও সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরী

গণমাধ্যমে - প্লাস্টিক বর্জ্য

২০২৪-১২-২১

প্রায় ১২০০ কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।