প্রবাসী বাংলাদেশীরা এবং তাদের অবদান: একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রেরিত রেমিট্যান্স দেশের বৈদেশিক মুদ্রার ভারসাম্য বজায় রাখতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। ২০০১ সালে মাত্র ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স প্রবাহ ছিল, ২০২১ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.৮ বিলিয়ন ডলারে। এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধির পিছনে রয়েছে সরকারের নানা উদ্যোগ, যেমন রেমিট্যান্সে আয়কর মুক্তি এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা। ২০২২ সালের মে মাস থেকে প্রণোদনার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.৫%।
প্রবাসীদের জন্য সরকার বিভিন্ন বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড- এসব বন্ডে বিনিয়োগের মাধ্যমে তারা লাভজনক সুদে তাদের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারে এবং আয়কর থেকেও মুক্ত থাকে। জুন ২০২১ পর্যন্ত এসব বন্ডে মোট বিনিয়োগ ছিল প্রায় ১.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক লিমিটেড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাংক ২০১৮ সালে তফসিলি বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়। এটি প্রবাসীদের আর্থিক সেবা প্রদানের পাশাপাশি তাদের কল্যাণের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনা করে। ব্যাংকটির অর্থনৈতিক অবদান প্রশংসনীয়, যদিও ২০২০ সালে এর অংশগ্রহণ ব্যাংকিং খাতের মোট আমানত ও ঋণের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম ছিল।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের ইতিহাসেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য দিক। ‘প্রবাসী’ নামক একটি বিখ্যাত বাংলা সাময়িকী, ১৯০১ সালে এলাহাবাদ থেকে প্রকাশিত হতে শুরু করে। রমানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় এই সাময়িকী বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নন্দলাল বসু প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের লেখা ও চিত্রকর্ম এই সাময়িকীতে প্রকাশিত হতো। এই সাময়িকী বাংলাদেশের বাইরে বাঙালীদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে কাজ করেছে।