প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ: পশ্চিমবঙ্গের প্রথম মুখ্যমন্ত্রী ও স্বাধীনতা সংগ্রামী
ডঃ প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ (২৪ ডিসেম্বর ১৮৯১ - ১৮ ডিসেম্বর ১৯৮৩) ছিলেন একজন বিশিষ্ট ভারতীয় বাঙালি রাজনীতিবিদ ও স্বাধীনতা সংগ্রামী। ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা জেলার মালিকান্দা গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা পূর্ণচন্দ্র ঘোষ ছিলেন একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের তিনবার মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রথম মুখ্যমন্ত্রীত্বকাল ছিল ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৪৮ সালের ১৪ আগস্ট। পরবর্তীতে, তিনি ১৯৬৭ সালের ২১ নভেম্বর থেকে ১৯৬৮ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত “প্রগ্রেসিভ ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স ফ্রন্ট” সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। রসায়নে তিনি ঢাকার জগন্নাথ কলেজ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। ১৯২০ সালে তিনি ডি.এসসি ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি কিছুদিন প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করেন এবং পরে কলকাতার টাঁকশালে প্রথম ভারতীয় ডেপুটি অ্যাসেস মাস্টার হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯২১ সালে টাঁকশালের চাকরি ছেড়ে তিনি স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদান করেন এবং ৮ বছর কারাবাস ভোগ করেন। মহাত্মা গান্ধীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি অভয় আশ্রম নির্মাণ করেন এবং ঢাকার বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন।
স্বাধীন ভারতের প্রথম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে তিনি প্রশাসনিক উৎকর্ষ, দুর্নীতি দমন এবং দুর্নীতিরোধী অর্ডিন্যান্স জারি করেন। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং দুই বছরের মধ্যে বাংলা ভাষাকে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি ভাষা হিসেবে প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালে রাজশেখর বসু, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ শিক্ষাব্রতীদের নিয়ে বাংলা পরিভাষা কমিটি গঠন করেন। তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জোড়াসাঁকোর বাড়িটি রবীন্দ্রভারতী সোসাইটির হাতে তুলে দিতে সহায়তা করেন। কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সাথে মতবিরোধের কারণে তিনি মন্ত্রী পদ থেকে সরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি কৃষক মজদুর প্রজা পার্টি (যা পরে প্রজাসমাজতন্ত্রী দল হিসেবে পরিচিত হয়) ও অন্যান্য দলের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর জীবনের শেষ ভাগে তিনি গ্রন্থ রচনা এবং আধ্যাত্মিক চর্চায় মনোনিবেশ করেন।