মালয়েশিয়ার ক্লাং বন্দর (পোর্ট ক্লাং): একটি ঐতিহাসিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর
মালয়েশিয়ার স্ট্রেইট অফ মালাক্কায় অবস্থিত ক্লাং বন্দর, আনুষ্ঠানিক নাম পোর্ট ক্লাং, দেশটির অন্যতম বৃহৎ এবং ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর। উপনিবেশিক যুগে এটি পোর্ট সুইটেনহ্যাম নামে পরিচিত ছিল। ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে এর বর্তমান নামকরণ করা হয়। ক্লাং শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং কুয়ালালামপুর থেকে ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত এই বন্দরটি বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত কন্টেইনার বন্দর হিসেবে পরিচিত। ২০১২ সালে এটি বিশ্বের ২১তম ব্যস্ততম কন্টেইনার বন্দর ছিল।
ঐতিহাসিক দিক:
আঠারো শতকের শেষভাগে ক্লাং ছিল সেলানগর রাজ্যের রাজধানী। ১৮৮০ সালে কৌশলগত সুবিধার জন্য রাজধানী কুয়ালালামপুরে স্থানান্তরিত হলেও, ক্লাংয়ের বন্দর ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে যায়। তৎকালীন ব্রিটিশ কর্মকর্তা ফ্রাঙ্ক সুইটেনহ্যাম ক্লাং এবং কুয়ালালামপুরের মধ্যে রেলপথ স্থাপনের প্রস্তাব দেন যাতে পরিবহনের সমস্যা সমাধান হয়। ১৮৮৬ সালে কুয়ালালামপুর থেকে বুখিট কুদু পর্যন্ত এবং ১৮৯০ সালে ক্লাং পর্যন্ত রেলপথ চালু হয়। নদীপথ ব্যবহারের অসুবিধার কারণে নদীর মোহনায় নতুন বন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ১৯০১ সালে ফ্রাঙ্ক সুইটেনহ্যাম নিজেই এই নতুন বন্দর, যা পরবর্তীতে পোর্ট সুইটেনহ্যাম নামে পরিচিত হয়, উদ্বোধন করেন।
বন্দরের উন্নয়ন ও বর্তমান অবস্থা:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বন্দরটির ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। ১৯৬৩ সালে পোর্ট সুইটেনহ্যাম কর্তৃপক্ষ (পরে পোর্ট ক্লাং কর্তৃপক্ষ) প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর ক্রমে ক্রমে বন্দরটি আধুনিকীকরণ এবং সম্প্রসারণ করা হয়। বর্তমানে পোর্ট ক্লাং কর্তৃপক্ষ নর্থপোর্ট, সাউথপয়েন্ট এবং ওয়েস্টপোর্ট - এই তিনটি বন্দর পরিচালনা করে। ওয়েস্টপোর্ট ও নর্থপোর্ট বেসরকারি উদ্যোগের অধীনে পরিচালিত হয়। বন্দরটির ক্ষমতা ২০০৫ সালে দাঁড়িয়েছিল ১০৯,৭০০,০০০ টন কার্গো, যা ১৯৪০ সালে ছিল ৫৫০,০০০ টন মাত্র।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
পোর্ট ক্লাং মালয়েশিয়ার অর্থনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি দেশের আমদানি-রপ্তানির প্রধান কেন্দ্র এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সাথে বাণিজ্যিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। বিশেষ করে এলুমিনিয়ামের গুদাম হিসেবে এর বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে।
সারসংক্ষেপে:
পোর্ট ক্লাং মালয়েশিয়ার ইতিহাস ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী একটি গৌরবোজ্জ্বল সমুদ্রবন্দর। এর ঐতিহাসিক উন্নয়ন, বর্তমান অবস্থা এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিবেচনায় এটি মালয়েশিয়ার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সম্পদ।