বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো): দেশের জীবনরেখা
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। এই গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, যার দায়িত্ব দেশের নদী, জলপথ, এবং ভূগর্ভস্থ পানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা।
বাপাউবোর ইতিহাস:
১৯৫৪, ১৯৫৫ ও ১৯৫৬ সালের ধারাবাহিক বন্যার পর, পাকিস্তান সরকার জাতিসংঘের কাছে কারিগরি সহায়তার আবেদন করে। এর ফলে ‘ক্রুগ মিশন’ গঠিত হয়, যার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ১৯৫৯ সালে ‘পূর্ব পাকিস্তান ওয়াটার অ্যান্ড পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (ইপিওয়াপদা) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ইপিওয়াপদা বিলুপ্ত হয়ে বর্তমান বাপাউবো গঠিত হয়। ২০০০ সালে ‘বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড আইন-২০০০’ পাশ হয়, যা বোর্ডের কার্যক্রম ও কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করে।
বাপাউবোর কার্যক্রম:
বাপাউবোর কার্যক্রম দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত: কাঠামোগত ও অকাঠামোগত। কাঠামোগত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে নদী নিয়ন্ত্রণ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ব্যবস্থা, জলাধার নির্মাণ, জলপথ উন্নয়ন, উপকূলীয় বাঁধ নির্মাণ ইত্যাদি। অকাঠামোগত কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বন্যা পূর্বাভাস, পানি সম্পর্কিত গবেষণা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
উল্লেখযোগ্য সাফল্য:
বাপাউবো বন্যা নিয়ন্ত্রণে, সেচ ব্যবস্থার উন্নয়নে, এবং পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫৮.৯১ লক্ষ হেক্টর এলাকা বন্যা প্রতিরোধের আওতায় আনা হয়েছে এবং ১৪.১৪ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান করা হয়। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের হাওর অঞ্চলে বোরো ধান চাষের জন্যও বাপাউবো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
চ্যালেঞ্জ:
জলবায়ু পরিবর্তন, নদীর পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া, নদী ভাঙ্গন, পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়া, পুরানো সেচ প্রকল্পের অকার্যকরতা, উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি ইত্যাদি বাপাউবোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।
সামগ্রিকভাবে, বাপাউবো বাংলাদেশের পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আরও সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের আরও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ও মানবসম্পদ বৃদ্ধির প্রয়োজন।