পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এককক্ষীয় আইনসভা। কলকাতার বিবাদীবাগে, হাইকোর্টের দক্ষিণে এর অবস্থান। বিধানসভার সদস্যদের বিধায়ক বলে। তারা পাঁচ বছরের জন্য জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হন। মোট আসন সংখ্যা ২৯৫; ২৯৪টি আসন একক-আসনবিশিষ্ট কেন্দ্র থেকে ও একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত হন। সাধারণত, বিধানসভার মেয়াদ পাঁচ বছর, কিন্তু তা আগে ভেঙে দেওয়া যেতে পারে।
বিধানসভার ইতিহাস ১৮৬১ সালের ভারতীয় কাউন্সিল আইনের সাথে জড়িত। ১৮৬২ সালের ১৮ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল বঙ্গ প্রদেশের একটি ১২ সদস্য বিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করেন। এতে বাংলার লেফটেনেন্ট গভর্নর ও কিছু মনোনীত সদস্য ছিলেন। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৮৬২ প্রথম অধিবেশন হয়। প্রাথমিকভাবে একে বেঙ্গল কাউন্সিল, লেফটেনেন্ট গভর্নরের কাউন্সিল, বেঙ্গল অ্যাসেম্বলি ইত্যাদি নামে ডাকা হত। প্রথম দিকে এর রাজনৈতিক কার্যকলাপ সীমিত ছিল, কিন্তু ১৮৯২, ১৯০৯ ও ১৯১৯ সালের আইন অনুযায়ী সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। ১৯১৯ সালের আইন অনুযায়ী গঠিত হয় বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভা (বেঙ্গল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল)। ১ ফেব্রুয়ারি, ১৯২১ ডিউক অফ কনট এটি উদ্বোধন করেন।
১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইনসভাকে দুটি কক্ষে বিভক্ত করে: লেজিসলেটিভ কাউন্সিল ও লেজিসলেটিভ অ্যাসেম্বলি। ২৫০ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাসেম্বলির মেয়াদ সর্বাধিক ৫ বছর ছিল। কাউন্সিল ছিল স্থায়ী; সদস্য সংখ্যা ছিল ৬৩-৬৫ জন। প্রতি তিন বছরে এক তৃতীয়াংশ সদস্য অবসর নিতেন।
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট বঙ্গ প্রদেশ পশ্চিমবঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানে বিভক্ত হয়। পশ্চিমবঙ্গের ৯০ জন বিধায়ক ও দুইজন মনোনীত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সদস্য নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা গঠিত হয়। ২১ নভেম্বর, ১৯৪৭ প্রথম অধিবেশন বসে। প্রফুল্লচন্দ্র ঘোষ প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হন। বিধানচন্দ্র রায়, জ্যোতি বসু অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন।
ভারতীয় সংবিধান পশ্চিমবঙ্গের জন্য দ্বিকক্ষীয় বিধানসভা অনুমোদন করে। ১৯৫২ সালের ৫ জুন ৫১ সদস্যবিশিষ্ট বিধান পরিষদ গঠিত হয়। বিধানসভার সদস্য সংখ্যা ছিল ২৪০ (২ জন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান)। ১৮ জুন, ১৯৫২ প্রথম অধিবেশন হয়। ১৯৬৯ সালের ২১ মার্চ বিধান পরিষদ অবলুপ্তির প্রস্তাব পাস হয়, এবং ১ আগস্ট, ১৯৬৯ তা অবলুপ্ত হয়।
২০০২ সালের সীমানা পুনর্নির্ধারণ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ২০০৮ সালে পুনর্নির্ধারিত হয় বিধানসভা কেন্দ্রগুলির সীমানা। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস ২১৩ (পরে ২১৫) আসনে জয়ী হয় এবং বিজেপি ৭৭টি আসনে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হন। বিভিন্ন সময়কালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের ক্ষমতাচ্যুতি ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠানের ইতিহাসও বিধানসভার ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।