পত্র

চিঠি: অতীত থেকে বর্তমান পর্যন্ত যোগাযোগের এক অমূল্য মাধ্যম

চিঠি, বা পত্র, মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ চিঠি আদান-প্রদান করে তথ্য, অনুভূতি ও ভাবনা বিনিময় করেছে। ইলিয়াড, হিরোডোটাস ও থুসিডাইডিসের রচনায় এর উল্লেখ পাওয়া যায়। প্রাচীন ভারত, মিশর, সুমের, রোম, গ্রিস ও চীনে চিঠির ব্যবহার ছিল প্রচলিত। ১৭ ও ১৮ শতকে স্ব-শিক্ষা, তথ্য আদান-প্রদান, অভিজ্ঞতা বর্ণনা, বিতর্ক ও আইডিয়া বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে চিঠির গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। বাইবেলের বেশ কিছু অংশ চিঠির মাধ্যমে লেখা হয়েছে।

ঐতিহাসিকভাবে, ব্যক্তিগত, কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সকল প্রকারের চিঠিই ঐতিহাসিকদের কাছে প্রাথমিক তথ্যের উৎস হিসেবে কাজ করেছে। কিছু কিছু চিঠি এমন শৈল্পিক রূপ পেয়েছে যে তা সাহিত্যের একটি আলাদা শাখা হয়ে উঠেছে, যেমন বাইজেন্টাইন এপিস্টোলোগ্রাফি। প্রাচীনকালে চিঠি লেখার জন্য ধাতু, কাঠ, পোড়ামাটি, পশুর চামড়া ও প্যাপিরাস ব্যবহার করা হত। অভিধানিক ও গ্রামারের অধ্যয়ন চিঠি লেখার সাথে জড়িত।

মধ্যযুগে পারিবারিক চিঠির সংগ্রহ ঐতিহাসিকদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস। প্যাস্টন চিঠি (১৪২৫-১৫২০ খ্রিস্টাব্দ) ব্রিটেনের রোজ যুদ্ধের সময়ের জীবন সম্পর্কে তথ্য দান করে। টেলিগ্রাফ, টেলিফোন ও ইন্টারনেটের আবির্ভাবের আগে চিঠি ছিল প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। অশিক্ষিত লোকেরাও লিখিত ব্যক্তিদের মাধ্যমে চিঠি পাঠাত ও পড়ত। ফ্যাক্স ও ইমেইলের আবির্ভাবের পর চিঠির গুরুত্ব কমতে থাকে।

রাজনৈতিক দিক থেকে চিঠি প্রায়শই সরকারী তদারকি ও জব্দ করার শিকার হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণাগারে সংরক্ষিত ব্যক্তিগত চিঠি লেখকের উদ্দেশ্য ও সরকারী কর্মকর্তাদের ব্যাখ্যা উভয়ই প্রকাশ করে। চিঠি জব্দের ফলে পত্রবিনিময় ও অভিবাসনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো। ১৮ শতকে চিঠির মাধ্যমে লেখা উপন্যাস জনপ্রিয় হয়েছিল। এই সময়কার চিঠি গোপনীয়তা, গোপনীয়তা ও আস্থার পরিবর্তিত ধারণা সম্পর্কে তথ্য প্রদান করে। চিঠিপত্রের অধ্যয়ন লেখার সাথে জড়িত অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিকগুলো উন্মোচন করে।

আলেকজান্ডার পোপ প্রথম ইংরেজ লেখক যিনি তার জীবদ্দশায় তার নিজস্ব চিঠি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি ধর্মীয় ভক্তি ও বুদ্ধিমত্তার প্রতিফলন হিসেবে চিঠিকে ব্যবহার করেছিলেন। শনিবারের চিঠি, একটি স্যাটায়ারধর্মী সাহিত্যিক পত্রিকা, হাস্যরস ও ব্যঙ্গের মাধ্যমে তৎকালীন সাহিত্যের সমালোচনা করতো। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, প্রমথ চৌধুরী প্রমুখ কেউই এর ব্যঙ্গ থেকে রেহাই পাননি।

বর্তমানে ইমেইলের জনপ্রিয়তার পরেও চিঠির ব্যবহার অব্যাহত আছে, বিশেষ করে ব্যবসায়িক ও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগে। কাগজের চিঠির কিছু সুবিধা: ব্যক্তিগত, স্থায়ী, আবেগপ্রবণ। ইমেইল ও টেক্সটের কিছু সুবিধা: দ্রুত, সহজ, ব্যয় সাশ্রয়ী। চিঠি প্রেরণ প্রক্রিয়া দূরত্ব অনুসারে এক দিন থেকে ৩-৪ সপ্তাহ সময় নিতে পারে। ২০০৮ সালে ব্রিটেনে ৮৯ বছর পর একটি চিঠি পৌঁছে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল। চিঠির আকার ও রীতি সময় ও স্থানের উপর নির্ভর করে। ব্যবসায়িক চিঠিপত্রের আকার একসময় অত্যন্ত মানানসইভাবে নির্ধারিত ছিল। ক্রিপ্টোগ্রাফি ও টেম্পার-ইভিডেন্ট প্রযুক্তি চিঠির গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যবহার করা হতো। ডিপ্লোমেটিক মেইল পৌঁচ সিস্টেম আলাদাভাবে পরিচালিত হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • চিঠি প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের যোগাযোগের এক অমূল্য মাধ্যম।
  • ১৭-১৮ শতকে চিঠি লেখা ছিল স্বশিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  • ঐতিহাসিকরা চিঠিপত্রকে গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করে।
  • শনিবারের চিঠি ছিল একটি বিখ্যাত স্যাটায়ারধর্মী বাংলা পত্রিকা।
  • ইমেইলের জনপ্রিয়তার পরেও ব্যক্তিগত ও আনুষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য চিঠি ব্যবহার করা হয়।

গণমাধ্যমে - পত্র

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

এই দিনে চিঠি পাঠানো হয়।

২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০০ এএম

বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠায়।

২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশ সরকার ভারতের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

24/12/2024

বাংলাদেশ ভারতকে একটি চিঠি পাঠিয়েছে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ করে।