নেপাল: হিমালয়ের রত্ন
দক্ষিণ এশিয়ার স্থলবেষ্টিত রাষ্ট্র নেপাল (নেপালি: नेपाल), আনুষ্ঠানিকভাবে নেপাল যুক্তরাষ্ট্রীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র (নেপালি: सङ्घीय लोकतान्त्रिक गणतन्त्र नेपाल) নামে পরিচিত। উত্তরে চীন এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিমে ভারতের সীমান্তে বেষ্টিত এই দেশটির ৮১% জনসংখ্যা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। ছোট আয়তনের হলেও নেপালের ভূ-প্রকৃতি অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। তরাই অঞ্চলের আর্দ্র আবহাওয়া থেকে শুরু করে বিশাল হিমালয় পর্যন্ত এর বৈচিত্র্য দেখা যায়। চীন ও নেপালের সীমান্তে অবস্থিত অঞ্চলে পৃথিবীর সর্বোচ্চ ১০ পর্বতের ৮টি অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট।
নেপাল নামের উৎপত্তি সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য নেই। তবে, জনপ্রিয় মত অনুসারে ‘নে’ (পবিত্র) এবং ‘পাল’ (গুহা) শব্দ থেকে নেপাল নামের উৎপত্তি। কাঠমান্ডু উপত্যকায় প্রাপ্ত নিওলিথিক যুগের উপাদান সমাধান করে যে হিমালয় অঞ্চলে প্রায় ৯০০০ বছর ধরে মানুষ বসবাস করে। প্রায় ২৫০০ বছর পূর্বে তিব্বতী-বার্মীয় জনগোষ্ঠী এবং ১৫০০ খৃস্টপূর্বাব্দে ইন্দো-ইরানীয় বা আর্য জাতিগোষ্ঠী এই অঞ্চলে প্রবেশ করে। ১০০০ খৃস্টপূর্বাব্দের দিকে বিভিন্ন গোষ্ঠীর স্বতন্ত্র রাজ্য ও কনফেডারেশন গড়ে উঠে। সাক্যের কনফেডারেশনের রাজা ছিলেন সিদ্ধার্থ গৌতম (৫৬৩-৪৮৩ খৃস্টপূর্বাব্দ), যিনি বুদ্ধ নামে পরিচিত।
২৫০ খৃস্টপূর্বাব্দে মৌর্য সম্রাজ্য এবং ৪র্থ শতাব্দীতে গুপ্ত সম্রাজ্যের অধীনে আসে নেপাল। ৫ম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে কিছুকাল লিচ্ছবি শাসন করে। ৮ম শতাব্দীতে লিচ্ছবি সাম্রাজ্যের পতনের পর নেওয়ারী যুগের সূত্রপাত। ৮৭৯ সালে নেওয়ারীদের রাজত্ব শুরু হয়। ১১শ শতাব্দীর শেষভাগে দক্ষিণ ভারতের চালুক্য সাম্রাজ্য নেপালের দক্ষিণাংশ দখল করে। চালুক্যদের রাজত্বে হিন্দু ধর্ম প্রসার পায়।
১২শ শতাব্দীতে মল্ল রাজাদের শাসন। গোর্খা রাজা পৃথ্বীনারায়ণ শাহ কয়েক দশক যুদ্ধ করে কাঠমান্ডু উপত্যকা দখল করে ছোট বড় রাজ্যে বিভক্ত নেপালকে ঐক্যবদ্ধ করে। তাকে আধুনিক নেপালের প্রতিষ্ঠাতা বলা যায়।
বর্তমান নেপাল একটি বহুদলীয় প্রজাতন্ত্র। ২০০৮ সালের মে মাসে সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। রাম চন্দ্র পাউডেল রাষ্ট্রপতি এবং পুষ্প কমল দাহাল প্রধানমন্ত্রী। ১৭৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত নেপালি সেনাবাহিনী ২০০৮ সাল পর্যন্ত ‘রাজকীয় নেপালি সেনা’ নামে পরিচিত ছিল। নেপালের কোন বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনী নেই।
নেপাল ১৪টি প্রশাসনিক অঞ্চল (অঞ্চল) ও ৭৫টি জেলায় বিভক্ত। ভৌগোলিকভাবে তিন ভাগে বিভক্ত: পর্বত, পাহাড়ী উঁচু ভূমি ও তরাই। অর্থনীতি মূলত পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দেশটির একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
নেপালি ভাষা সরকারি ভাষা। প্রায় ১২০টি ভাষা প্রচলিত। নেপালের সংস্কৃতি হিন্দু ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিশ্রণ। উল্লেখযোগ্য উৎসব: বিজয়া দশমী, বুদ্ধ জয়ন্তী, তিহার, ল্হোসার।
নেপালের বন্যপ্রাণীর বৈচিত্র্য উল্লেখযোগ্য। সাগরমাথা জাতীয় উদ্যান ও চিতওয়ান জাতীয় উদ্যান বিশ্ব ঐতিহ্য।