নুরুল আমিন: একজন বিতর্কিত নেতা
নুরুল আমিন (১৫ জুলাই, ১৮৯৩ - ২ অক্টোবর, ১৯৭৪) ছিলেন একজন বাঙালি রাজনীতিবিদ, আইনজীবী এবং পাকিস্তানের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী। তিনি পাকিস্তানের একমাত্র উপ-রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তাঁর জন্ম ব্রিটিশ ভারতের ত্রিপুরা জেলার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় (বর্তমান বাংলাদেশ), পৈত্রিক বাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইলে।
শিক্ষা ও আইনজীবী জীবন:
ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে কলেজ প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হওয়ার পর আনন্দমোহন কলেজ থেকে কলা বিভাগে উচ্চমাধ্যমিক এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন ও বিচারে এলএলবি ডিগ্রি লাভ করেন এবং বার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ময়মনসিংহ জজ আদালতে আইনজীবী হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন।
রাজনৈতিক জীবন:
১৯২৯ সালে ময়মনসিংহ লোকাল বোর্ডের সদস্য হিসেবে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ জেলা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং ময়মনসিংহ পৌরসভার কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুসলিম লীগের প্রথম দিকের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পাকিস্তান আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর বিশ্বস্ত সহযোগী হিসেবে তিনি পূর্ব বাংলার মুসলিমদের অধিকার রক্ষার জন্য কাজ করেন। ১৯৪৮ সালে পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং সরবরাহ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও ছিলেন।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের বিরোধী ছিলেন নুরুল আমিন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন এবং ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। কিন্তু মাত্র ১৩ দিন ক্ষমতায় থাকার পর তিনি পদত্যাগ করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন, যা তাকে বিতর্কিত করে তুলেছে।
মৃত্যু:
১৯৭৪ সালের ২ অক্টোবর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে মৃত্যুবরণ করেন এবং রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত হন।
বিতর্ক:
নুরুল আমিনের রাজনৈতিক জীবন ও অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে। পাকিস্তানের অনেকে তাঁকে দেশপ্রেমিক হিসেবে মনে করেন, অন্যদিকে অনেক বাংলাদেশী তাঁকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে বিবেচনা করেন। তাঁর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করার ও পাকিস্তানীদের সহযোগিতা করার অভিযোগ রয়েছে।