মোহাম্মদ নাসির: শিশুসাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ
মোহাম্মদ নাসির (১৯১০-১৯৭৫), বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও গ্রন্থপ্রকাশক। ঢাকা জেলার বিক্রমপুরের ধাইদা গ্রামে ১৯১০ সালের ১০ জানুয়ারি তাঁর জন্ম। পিতা হায়দার আলী ছিলেন একজন ব্যবসায়ী। তেলিরবাগ কালীমোহন-দুর্গামোহন ইনস্টিটিউশন থেকে এন্ট্রান্স (১৯২৬) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিকম (১৯৩১) পাশ করে তিনি কলকাতায় চাকরির সন্ধানে যান। ১৯৩৩ সালে কলকাতা হাইকোর্টে অনুবাদক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৬ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেহাদ পত্রিকার শিশুবিভাগের পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর ঢাকায় ফিরে আবারও হাইকোর্টে চাকরিতে যোগ দেন এবং ১৯৬৭ সালে অবসর নেন। তবে তার আগেই ১৯৪৯ সালে তিনি ‘নওরোজ কিতাবিস্তান’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও সক্রিয় রয়েছে। ১৯৫২ সালে দৈনিক আজাদের শিশু-কিশোর বিভাগে ‘মুকুলের মহফিল’ পরিচালনা শুরু করেন এবং ‘বাগবান’ ছদ্মনামে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্ব পালন করেন।
শিশুসাহিত্যে নাসির আলীর অবদান অপরিসীম। শিশুতোষ গ্রন্থ রচনার পাশাপাশি তিনি শিক্ষামূলক গল্প, প্রবন্ধ ও জীবনীও রচনা করেছেন। তাঁর রচনায় নির্মল হাস্যরসের এক অনবদ্য ছোঁয়া রয়েছে। ‘আমাদের কায়েদে আজম’, ‘মণিকণিকা’, ‘ছোটদের ওমর ফারুক’, ‘আকাশ যারা করলো জয়’, ‘আলী বাবা’, ‘টলস্টয়ের সেরা গল্প’, ‘ইতালীর জনক গ্যারিবল্ডি’, ‘বীরবলের খোশ গল্প’, ‘লেবু মামার সপ্তকান্ড’, ‘আলবার্ট আইনস্টাইন’, ‘মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা’ ইত্যাদি তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনা। সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৭), ইউনেস্কো পুরস্কার (১৯৬৮) ও ইউনাইটেড ব্যাংক অব পাকিস্তান পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৫ সালের ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় তাঁর মৃত্যু হয়। নাসির আলী শুধু একজন লেখক ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক, একজন প্রকাশক, আর সর্বোপরি একজন শিশুপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। তার লেখা গুলো আজও বাংলাদেশের শিশুদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।