নবীগঞ্জ: হবিগঞ্জ জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য্য ও সমৃদ্ধ ঐতিহাসিক গৌরবে পরিপূর্ণ। ৪৩৯.৬১ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলার অবস্থান ২৪°২৫´ থেকে ২৪°৪১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৪´ থেকে ৯১°৪০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে দিরাই ও জগন্নাথপুর, দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর ও বাহুবল, পূর্বে শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার সদর ও বালাগঞ্জ এবং পশ্চিমে বানিয়াচং উপজেলা নবীগঞ্জকে ঘিরে রেখেছে।
প্রায় ৩৪৫১৭৯ জনসংখ্যার এই উপজেলায় মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ বসবাস করে। বরাক, লংলা বিজনী, বিবিয়ানা, ডিমা ও কুলকুলিয়া নদীসহ জুরা বিল, কুলিয়াভাঙ্গা বিল ও গঞ্জুয়া বিল নবীগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে অবদান রাখে। ১৮৩৯ সালে থানা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নবীগঞ্জ ১৯৮৩ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়।
ঐতিহাসিক দিক থেকে নবীগঞ্জের গুরুত্ব অপরিসীম। রাজা ভগদত্তের উপরাজধানী 'সদরঘাট' ও নবীগঞ্জের চৌকি এর প্রমাণ বহন করে। মুক্তিযুদ্ধে দিনারপুর, বাউসা ইউনিয়নের চৌধুরী বাজার এবং শতক প্রাথমিক বিদ্যালয় রাজাকার ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান পরিচালনার ঘটনা ইতিহাসে স্মরণীয়। দিনার হাইস্কুল এলাকায় পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখযুদ্ধও নবীগঞ্জের মুক্তিযুদ্ধের অংশ। উপজেলায় একটি গণকবর ও একটি স্মৃতিস্তম্ভ রয়েছে।
শিক্ষা, সংস্কৃতি ও অর্থনীতির দিক থেকেও নবীগঞ্জ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। ৩টি কলেজ, ৩০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৭২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বেশ কিছু মাদ্রাসা শিক্ষার প্রসারে অবদান রাখছে। নবীগঞ্জ জে কে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৬) ও দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২১) এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড নবীগঞ্জের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা নবীগঞ্জের জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস। উপজেলায় বিভিন্ন হাটবাজার ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। নবীগঞ্জের প্রকৃতির সৌন্দর্য্য ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব পর্যটকদের আকর্ষণ করে।