নচিকেতা চক্রবর্তী: বাংলা সংগীতের এক অমিত্রিয় নক্ষত্র
নচিকেতা চক্রবর্তী, নামটিই যেন বাংলা সংগীতের সঙ্গে একাত্ম। একজন সাধারণ গায়কের থেকেও অধিক, তিনি একজন কবি, সুরকার, গীতিকার এবং অভিনেতা। ১৯৯০-এর দশকে 'এই বেশ ভালো আছি' অ্যালবামের মাধ্যমে তিনি বাংলা সংগীত জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। এই অ্যালবামটি তাঁকে রাতারাতি জনপ্রিয় করে তোলে। তার গানের মধ্য দিয়ে বাস্তবতার প্রতিফলন, জীবনের নানা রঙের সুন্দর উপস্থাপনা তাঁকে অনন্য করে তুলেছে।
জন্ম ও প্রাথমিক জীবন:
১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ সালে কলকাতার মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে নচিকেতার জন্ম। তবে, তার সার্টিফিকেট অনুযায়ী তার জন্ম তারিখ হল ১ সেপ্টেম্বর ১৯৬৫। তার পৈতৃক বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া উপজেলার চেচরিরামপুর গ্রামে। তিনি উত্তর কলকাতার মণীন্দ্র কলেজে পড়াশোনা করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি গান লেখা এবং গান চর্চা শুরু করেন।
সংগীত জীবন:
'এই বেশ ভালো আছি' অ্যালবামের পর নচিকেতা একের পর এক জনপ্রিয় গান উপহার দিয়ে যান। তার গানে চলিত ভাষা, সহজ-সাবলীল কথা, বাস্তবতার প্রতিফলন শ্রোতাদের মনে গভীর ছাপ রাখে। 'নীলাঞ্জনা তৃতীয় খণ্ড' তার নিজের লেখা গানের মধ্যে অন্যতম প্রিয়। তিনি এ পর্যন্ত তিনশতেরও বেশি গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। তার গানের মধ্যে 'অন্তবিহীন পথ চলাই জীবন', 'যখন সময় থমকে দাঁড়ায়', 'এ মন ব্যাকুল যখন তখন', 'এক বোকা বুড়োর গল্প শোন', 'এরই নাম হল বেঁচে থাকা', 'রাজর্ষি তোমার জন্য' ইত্যাদি গান বেশ জনপ্রিয়। তিনি একক অ্যালবাম ছাড়াও যৌথ অ্যালবাম এবং সিনেমার গান গেয়েছেন এবং সংগীত পরিচালনাও করেছেন। 'হঠাৎ বৃষ্টি' ছবিটিতে তিনি সংগীত পরিচালক ও গায়ক হিসেবে কাজ করেছেন।
লেখালেখি:
সংগীতের পাশাপাশি নচিকেতা লেখালেখিতেও সমান দক্ষ। জ্যাক লন্ডন, মহাভারতের কৃষ্ণচরিত্র, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি ও শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় তার লেখালেখিতে প্রভাব ফেলেছে। তিনি বেশ কিছু গল্প ও দুটি উপন্যাস লিখেছেন।
সম্মান ও পুরস্কার:
তিনি বঙ্গভূষণ, সঙ্গীতভূষণসহ অনেক সরকারি-বেসরকারি সম্মান পেয়েছেন।
উপসংহার:
নচিকেতা চক্রবর্তী শুধু একজন গায়ক নন, তিনি বাংলা সংগীতের এক অনন্য সম্পদ। তার জীবনমুখী গান, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, প্রতিভার বৈচিত্র্য তাকে অনন্য করে তুলেছে। আশা করা যায়, তিনি আরও অনেক বছর ধরে বাংলা সংগীত জগতকে নিজের গানের উপহার দিয়ে আলোকিত করে রাখবেন।