ধর্মশালা: হিমাচল প্রদেশের রত্ন
ধর্মশালা, ভারতের হিমাচল প্রদেশের কাংরা জেলার একটি চমৎকার পাহাড়ি শহর। ধৌলাধর পর্বতশ্রেণীর ছায়ায় অবস্থিত এই শহরটি রাজ্যের শীতকালীন রাজধানী হিসাবে পরিচিত। ১৮৫৫ সাল থেকে কাংরা জেলার প্রশাসনিক সদর দপ্তর হিসাবেও ধর্মশালা কাজ করে আসছে। শুধুমাত্র প্রশাসনিক কার্যক্রম নয়, ধর্মশালা তিব্বত সরকারের নির্বাসিত প্রশাসনের আবাসস্থল হিসাবেও বিখ্যাত। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে ধর্মশালার জনসংখ্যা ছিল ১৯,০৩৪ জন, যার মধ্যে ৫৫% পুরুষ এবং ৪৫% মহিলা। এই শহরের সাক্ষরতা হার ৭৭%, যা সারা ভারতের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
ঐতিহাসিক ধর্মশালা:
প্রাচীন ঋগ্বেদ ও মহাভারতের উল্লেখ থেকে ধর্মশালা ও এর আশেপাশের এলাকার ঐতিহাসিক গুরুত্ব বোঝা যায়। মোগল আমল, শিখ সাম্রাজ্য এবং ব্রিটিশ শাসনের অধীনেও এই অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ১৮৪৬ সালে প্রথম অ্যাংলো-শিখ যুদ্ধের পরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই অঞ্চল দখল করে। ১৯০৫ সালের কাংরা ভূমিকম্প ধর্মশালার উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর, ধর্মশালা একটি ছোট পাহাড়ি শহর হিসেবেই ছিল।
তিব্বতীয় সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু:
১৯৫৯ সালে চীনের আগ্রাসনের পরে, চৌদ্দতম দালাই লামা তেনজিন গ্যাটসো তিব্বত ত্যাগ করে ভারতে আশ্রয় নেন। প্রথমে মুসোরিতে বসতি স্থাপন করে ১৯৬০ সালে তিনি তাঁর অনুসারীদের সাথে ধর্মশালার ম্যাকলিওড গঞ্জে স্থায়ী বসতি স্থাপন করেন। এর ফলে ধর্মশালা তিব্বতি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। এখানে অসংখ্য তিব্বতীয় মঠ, মন্দির, স্কুল এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়েছে।
অর্থনীতি ও পর্যটন:
ধর্মশালার অর্থনীতি কৃষিকাজ এবং পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। উপত্যকায় ধান, গম এবং চা চাষ হয়। কাংরা চা বিখ্যাত। ধর্মশালা একটি বড় পাহাড়ি স্টেশন ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিত। এখানে ট্রেকিং, হাইকিং এবং অন্যান্য বহিরঙ্গন কার্যকলাপের প্রচুর সুযোগ রয়েছে।
ভবিষ্যতের দিক:
ভারত সরকারের ‘স্মার্ট সিটি মিশন’ এর আওতায় ধর্মশালার উন্নয়ন করা হচ্ছে। এটি আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং আধুনিক পর্যটন স্থানে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।