দুর্গাপুর, নেত্রকোনা

আপডেট: ৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৮:৫৪ পিএম
নামান্তরে:
দুর্গাপুর নেত্রকোনা
দুর্গাপুর, নেত্রকোনা

দুর্গাপুর, নেত্রকোণা: ঐতিহ্য, প্রকৃতি ও সংস্কৃতির মেলবন্ধন

নেত্রকোণা জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত দুর্গাপুর উপজেলা, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা হিসেবে পরিচিত। ২৭৯.২৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক ঘটনা ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির এক অপূর্ব সমন্বয় দেখা যায়।

ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:

দুর্গাপুরের অবস্থান ২৪°৫৭' থেকে ২৫°১২' উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯০°২৮' থেকে ৯০°৪৭' পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে নেত্রকোণা সদর ও পূর্বধলা উপজেলা, পূর্বে কলমাকান্দা এবং পশ্চিমে ধোবাউড়া উপজেলা দুর্গাপুরকে ঘিরে রেখেছে। উপজেলার উত্তরাংশে গারো পাহাড় ও উপত্যকা অবস্থিত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, দুর্গাপুরের জনসংখ্যা ২২৪,৮৭৩; পুরুষ ১১১,৬৯১, মহিলা ১১৩,১৮২। এখানে গারো ও হাজং আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে। সোমেশ্বরী, কংস নদী এবং চিনাকুড়ি বিল, চিতলী বিল এর উল্লেখযোগ্য জলাশয়।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

১৮৭৪ সালে দুর্গাপুর থানা এবং ১৯৮২ সালে উপজেলায় রূপান্তরিত হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে হাজংদের হাতির খেদায় বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করানোর প্রতিবাদে হাজং নেতা মনা সর্দারের নেতৃত্বে হাজং বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। ১৯৪২-৪৩ সালে কমরেড মণি সিংহের নেতৃত্বে টংক আন্দোলন এবং ১৯৪৬-৪৭ সালে তেভাগা আন্দোলন দুর্গাপুরে পরিচালিত হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও দুর্গাপুর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাঁওকান্দিয়া গ্রামের একটি ঘটনার জের ধরে পাকবাহিনী অনেক নিরীহ লোককে হত্যা করে। ফারাংপাড়া, বাদামবাড়ি, বিরিশিরি-বিজয়পুর সড়ক প্রভৃতি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধ সংঘটিত হয়।

অর্থনৈতিক কার্যকলাপ:

দুর্গাপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, গম, সরিষা, চিনাবাদাম, ভুট্টা, তুলা এবং শাকসবজি এখানকার প্রধান কৃষি ফসল। চিনামাটি, কাকর মাটি, নুড়িপাথর ও কয়লা এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ। কুটিরশিল্পের মধ্যে স্বর্ণশিল্প, মৃৎশিল্প, লৌহশিল্প, তাঁতশিল্প, সূচিশিল্প ও কাঠের কাজ উল্লেখযোগ্য।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি:

দুর্গাপুরের শিক্ষার হার ৩৯.৫%। বিরিশিরি পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯২), বিরিশিরি মিশন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৯৯) এর মতো ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি এখানকার উল্লেখযোগ্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান।

দর্শনীয় স্থান:

বিজয়পুর সাদা মাটির খনি, দুর্গাপুর শহীদ স্মৃতিসৌধ, রাশিমনি স্মৃতিসৌধ, রাণীখং ক্যাথলিক চার্চ, গারো ব্যাপ্টিস্ট কনভেনশন ক্যাম্পাস, মনসাপাড়া এডভেনটিস্ট ও সেমিনার এখানকার বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান।

উপসংহার:

দুর্গাপুর উপজেলা নেত্রকোণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যেখানে প্রকৃতি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক সুন্দর মেলবন্ধন দেখা যায়। আরও তথ্য উপলব্ধ হলে, আমরা এই লেখাটি আরও সমৃদ্ধ করব।

মূল তথ্যাবলী:

  • দুর্গাপুর উপজেলা নেত্রকোণা জেলার উত্তরাংশে অবস্থিত।
  • ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তবর্তী এলাকা।
  • ঐতিহাসিক হাজং বিদ্রোহ, টংক আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন এখানে সংঘটিত হয়েছিল।
  • মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
  • বিজয়পুরের সাদা মাটির খনি, বিরিশিরি উপজাতীয় কালচারাল একাডেমি উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।