দালাল

দালাল: মুক্তিযুদ্ধের কলঙ্ক ও পরবর্তী ক্ষমা

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিদের সহযোগিতাকারীদের ‘দালাল’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি জারিকৃত ‘বাংলাদেশ কোলাবোরেটর্স ট্রাইব্যুনাল অর্ডার, ১৯৭২’ (কোলাবোরেটর্স আইন) এদের বিচারের ব্যবস্থা করে। এই আইন অনুযায়ী, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস এবং শান্তি কমিটির সদস্যসহ যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তাদের দালাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল।

দালালদের কাজে জড়িতদের বিচারের জন্য কোলাবোরেটর্স ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হলেও, ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে তাদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। তবে, হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি জঘন্য অপরাধে জড়িত ব্যক্তিরা এই ক্ষমার আওতায় ছিল না। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বিতর্কিত ও জটিল একটি বিষয় হিসেবে চিহ্নিত।

  • *দালালদের সংজ্ঞা:** কোলাবোরেটর্স আইন অনুসারে, দালাল হলেন সেসব ব্যক্তি যারা:

1. পাকিস্তানি বাহিনীকে বাংলাদেশে বেআইনি দখল টিকিয়ে রাখার কাজে সাহায্য, সহযোগিতা বা সমর্থন দিয়েছে।

2. প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকবাহিনীকে বস্তুগত সহযোগিতা প্রদান করেছে অথবা কোনো বক্তব্য, চুক্তি ও কার্যকলাপের মাধ্যমে তাদের সাহায্য করেছে।

3. গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে বা যুদ্ধের প্রয়াস চালিয়েছে।

4. পাকবাহিনীর অনুকূলে কোনো বিবৃতি প্রদান করেছে বা প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছে, পাকবাহিনীর কোনো প্রতিনিধিদল বা কমিটির সদস্য হয়েছে এবং ১৯৭১ সালে আয়োজিত উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে।

  • *বিতর্ক ও প্রভাব:** দালালদের প্রতি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা একটি বিতর্কিত সিদ্ধান্ত ছিল। অনেকে মনে করেন, এটি যুদ্ধাপরাধীদের দন্ডহীনতার পথ প্রশস্ত করেছে। অন্যদিকে, ক্ষমা ঘোষণাটিকে জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ হিসেবেও দেখা হয়। এই ঘটনার ইতিহাস ও প্রভাব আজও বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা এবং দালালদের পুনর্বাসনের প্রশ্ন এখনও তীব্র বিতর্কের বিষয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ১৯৭২ সালে দালাল আইন জারি
  • ১৯৭৩ সালে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা
  • রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসের সদস্যদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত
  • যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিতর্ক
  • জাতীয় ঐক্য vs. দন্ডহীনতা