দক্ষিণ চীন সাগর: একটি ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্র
দক্ষিণ চীন সাগর পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের একটি প্রান্তিক সাগর, যা প্রায় ৩৫ লক্ষ বর্গকিলোমিটার (১৪ লক্ষ বর্গমাইল) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি উত্তরে দক্ষিণ চীনের উপকূল, পশ্চিমে ইন্দোচীন উপদ্বীপ, পূর্বে তাইওয়ান ও ফিলিপাইনের উত্তর-পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জ (লুসোন, মিন্দোরো ও পালাওয়ান), এবং দক্ষিণে বোর্নিও, পূর্ব সুমাত্রা ও বাঙ্কা-বেলিটুং দ্বীপপুঞ্জ দ্বারা পরিবেষ্টিত। এটি বিভিন্ন প্রণালীর মাধ্যমে পূর্ব চীন সাগর, ফিলিপাইন সাগর, সুলু সাগর ও জাভা সাগরের সাথে যুক্ত। থাইল্যান্ড উপসাগর ও টনকিন উপসাগরও এর অংশ।
অর্থনৈতিক ও ভূ-কৌশলগত গুরুত্ব:
দক্ষিণ চীন সাগর বিশ্বের সামুদ্রিক বাণিজ্যের এক-তৃতীয়াংশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, প্রতি বছর ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অধিক বাণিজ্য বহন করে। এখানে বিপুল পরিমাণে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়। এছাড়াও সমুদ্রের লাভজনক মৎস্যশিল্প দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বীপপুঞ্জ ও সার্বভৌমত্ব বিতর্ক:
দক্ষিণ চীন সাগরের বেশ কয়েকটি ছোট দ্বীপ, দ্বীপপুঞ্জ, প্রবালভূমি ও উপকূলীয় এলাকা বিভিন্ন দেশের সার্বভৌমত্বের দাবিতে জড়িত। এই দাবিগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে এবং প্রায়ই তীব্রতর হয়েছে। চীন “নাইন-ড্যাশ লাইন” ব্যবহার করে এই সমুদ্রের প্রায় সব অংশের উপর দাবি করে, যা অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্বের দাবিকে উপেক্ষা করে।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও বিতর্ক:
১৯৭৪ সালে প্যারাসেল দ্বীপপুঞ্জের জন্য চীন ও ভিয়েতনামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ প্রাণ হারায়। ১৯৮৮ সালে স্প্র্যাটলি দ্বীপপুঞ্জেও ভিয়েতনাম ও চীনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এই বিতর্ক নিয়মিতভাবে নৌ-সংঘর্ষের আকার ধারণ করে। চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, ব্রুনাই ও তাইওয়ান দীর্ঘদিন ধরেই দক্ষিণ চীন সাগরের বিভিন্ন অংশে তাদের দাবি জানিয়ে আসছে।
ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব:
দক্ষিণ চীন সাগর ভূ-রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যবহৃত সামুদ্রিক পথ এবং মালাক্কা প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ খনিজ তেল পরিবহন হয়। এই সাগরের উপর দাবি এশিয়ার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ভূ-রাজনৈতিক বিন্দু হিসাবে বিবেচিত হয়।
সমাধানের প্রচেষ্টা:
আসিয়ান এবং বিভিন্ন দেশ এই বিতর্কের শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য চেষ্টা করে আসছে। তবে, চীনের দাবী এবং তাদের সামরিক বলের বৃদ্ধি এই প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলেছে। দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা চলছে।