তাহিরপুর: সুনামগঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলা, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপরূপ সমন্বয়। ৩১৫.৩৩ বর্গ কিমি আয়তনের এই উপজেলাটি ২৫°০১´ থেকে ২৫°১২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°০২´ থেকে ৯১°১৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থিত। উত্তরে ভারতের মেঘালয় রাজ্য, দক্ষিণে জামালগঞ্জ ও ধর্মপাশা, পূর্বে বিশ্বম্ভরপুর এবং পশ্চিমে ধর্মপাশা উপজেলা তাহিরপুরের সীমানা। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এখানকার জনসংখ্যা প্রায় ২১৫,২০০; পুরুষ ১১০,৫৫৫ এবং মহিলা ১০৪,৬৪৫। মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ এখানে বসবাস করে। আদিবাসী গারো, হাজং প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে।
তাহিরপুরের প্রাণকেন্দ্র বাউলাই, রক্তি ও পাটনাল নদী। টাঙ্গুয়ার হাওর, মতিয়ান বিল, সংসার বিলসহ অসংখ্য বিল, হাওর এই অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। ১৯২৪ সালে তাহিরপুর থানা গঠিত হয়। ষোড়শ শতকে রাজা বিজয় সিংহের বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষ এখানকার ঐতিহাসিক নিদর্শন। ১৯৯৭-৯৮ সালের ভাসান পানি আন্দোলন তাহিরপুরের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই আন্দোলনে ১০ জন কৃষক প্রাণ হারান এবং অনেকে কারাবরণ করেন। মুক্তিযুদ্ধে তাহিরপুরের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করে।
তাহিরপুরের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, বাদাম, গম, সরিষা প্রধান কৃষি ফসল। আম, কাঁঠাল, কলা প্রধান ফল। মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামারও রয়েছে। চুনাপাথর, বালি ও কয়লা এখানকার প্রাকৃতিক সম্পদ। তাহিরপুর বাজার, বাদাঘাট বাজার উল্লেখযোগ্য বাজার। টাঙ্গুয়ার হাওর, শ্রী শ্রী অদ্বৈত প্রভুর জন্মধাম, পণাতীর্থ ও বারেক টিলা দর্শনীয় স্থান। শিক্ষার হার ৩০.৪%। তাহিরপুর সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, জয়নাল আবেদীন মহাবিদ্যালয়, বাদাঘাট মহাবিদ্যালয় উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ব্র্যাক, আশা সহ বিভিন্ন এনজিও এখানে কাজ করে। যে কোন দিক থেকে দেখাই তাহিরপুর উপজেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় স্থান।