তাবলিগ জামাত: একটি বিশ্বব্যাপী ইসলামি ধর্মীয় আন্দোলন
তাবলিগ জামাত (উর্দু: تبلیغی جماعت) হলো একটি আন্তর্জাতিক ইসলাম ধর্মীয় আন্দোলন যার মূল লক্ষ্য হলো মুসলিমদের ধর্মীয় অনুশীলনকে আরও জোরদার করা এবং ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবনধারা অনুসরণের মাধ্যমে আধ্যাত্মিক পুনর্গঠন করা। ১৯২৬ সালে ভারতের মেওয়াত অঞ্চলে মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই আন্দোলনটি দেওবন্দি আন্দোলনের একটি শাখা হিসেবে বিবেচিত হয়।
তাবলিগ জামাতের মূলনীতি হলো ছয়টি মূলনীতি (উসুল) যা হলো: কালিমা (ঈমানের ঘোষণা), নামাজ (প্রার্থনা), ইলম ও যিকির (ধর্মীয় জ্ঞান ও স্মরণ), একরামুল মুসলিমিন (মুসলমানদের প্রতি সম্মান), সহিহ নিয়ত বা এখলাসে নিয়ত (বিশুদ্ধ মনোবাঞ্ছা), এবং দাওয়াত ও তাবলিগ (ধর্ম প্রচার)।
এই আন্দোলন রাজনীতি ও ফিকহ (ইসলামি আইনশাস্ত্র)-এর সাথে কোনো সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে এবং কেবলমাত্র কোরআন ও হাদিসের উপর গুরুত্বারোপ করে। তবে, কিছু সমালোচক তাদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনেছেন। তাবলিগ জামাত তাদের প্রচার কার্যক্রমের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের একত্রিত করার চেষ্টা করে এবং আধ্যাত্মিক চেতনা জাগ্রত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে।
আন্দোলনের প্রসার:
তাবলিগ জামাত দক্ষিণ এশিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়াসহ বিশ্বের প্রায় ২০০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তাদের আনুমানিক অনুসারীর সংখ্যা ১.২ কোটি থেকে ৮ কোটির মধ্যে।
সমালোচনা:
তাবলিগ জামাতের নানা সমালোচনা রয়েছে। কিছু সমালোচক তাদের রক্ষণশীলতা, নারীদের প্রতি অসমভাবে ব্যবহার, এবং রাজনৈতিক নিরপেক্ষতার জন্য সমালোচনা করেছেন। আবার কিছু দেশে তাদের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় তাদের আয়োজিত কিছু সমাবেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঘটনার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে তাবলিগ জামাত।
উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ও স্থান:
তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভি। ভারতের নিজামউদ্দিন মারকাজ মসজিদ এবং বাংলাদেশের কাকরাইল মসজিদ তাদের দুটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বিশ্ব ইজতেমা, তাদের বার্ষিক বৈশ্বিক সমাবেশ, বাংলাদেশের টঙ্গীতে অনুষ্ঠিত হয়।
শেষ কথা:
তাবলিগ জামাত একটি বৃহৎ ও প্রভাবশালী ইসলামি ধর্মীয় আন্দোলন। তাদের কর্মকাণ্ড ও প্রভাব নিয়ে নানা মতামত থাকলেও তাদের আধ্যাত্মিক পুনর্গঠন ও ধর্ম প্রচারের প্রচেষ্টা অস্বীকার করা যায় না।