তাইওয়ান প্রণালী

আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ৬:০৩ পিএম
নামান্তরে:
ফরমোসা প্রণালী
তাইওয়ান প্রণালী

তাইওয়ান প্রণালী: একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথের ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা

তাইওয়ান প্রণালী (চীনা: 台湾海峡, পিনয়িন: Táiwān Hǎixiá), প্রশান্ত মহাসাগরের একটি অংশ, চীনের ফুচিয়েন প্রদেশ এবং তাইওয়ান দ্বীপকে পৃথক করে। প্রায় ১৮০ কিলোমিটার (১১০ মাইল) প্রশস্ত এই প্রণালী দক্ষিণ চীন সাগরকে উত্তর-পূর্বে অবস্থিত পূর্ব চীন সাগরের সাথে সংযুক্ত করে। এর সর্বনিম্ন গভীরতা ৭০ মিটার। প্রণালীতে ফেংহু দ্বীপপুঞ্জ (পেস্কাদোরেস দ্বীপপুঞ্জ) অবস্থিত। চীনের মূল ভূখণ্ডে শিয়ামেন, ছুয়ানচৌ এবং ফুচৌ বন্দর শহরগুলি এবং তাইওয়ান উপকূলে কাও-শিয়ুং বন্দর প্রণালীর কাছে অবস্থিত।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

১৬শ শতকের শেষভাগে পর্তুগিজরা এই প্রণালীকে "ফরমোসা" (সুন্দর) প্রণালী নামকরণ করেছিল। পরবর্তীতে, ওলন্দাজ পূর্ব ইন্ডিয়া কোম্পানি, চীন, জাপান সহ অনেক শক্তি এই প্রণালী ও তাইওয়ান দ্বীপের নিয়ন্ত্রণে অংশগ্রহণ করেছিল। ১৬৬১ সালে, জেং চেংগোং (কক্সিঙ্গা) ওলন্দাজদের তাড়িয়ে তুংনিং রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন, কিন্তু পরবর্তীতে কিং রাজবংশের সাথে সংঘর্ষের পর ১৬৮৩ সালে পেংহু দ্বীপের যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে তুংনিং রাজ্যের পতন ঘটে। ১৮৯৫ সালে প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধের পর জাপান তাইওয়ান দখল করে, এবং ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর চীন প্রজাতন্ত্র (তাইওয়ান) তাইওয়ানের নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। ১৯৪৯ সালে চীনা গৃহযুদ্ধের পর থেকে তাইওয়ান প্রণালী চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্ত হিসেবে কাজ করে আসছে। প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তাইওয়ান প্রণালী সংকট এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

তাইওয়ান প্রণালী উত্তর-পূর্ব এশিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। এটি ব্যস্ত বাণিজ্যিক ও নৌপথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাইওয়ানে বৃহৎ বৃহৎ বন্দর, প্রচুর নদীর অববাহিকা, ও উচ্চমানের শিল্পায়নের কারণে এই প্রণালীর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অপরিসীম। সম্প্রতি তাইওয়ান প্রণালীতে বৃহৎ বৃহৎ বাতাসের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

রাজনৈতিক উত্তেজনা:

চীন তাইওয়ানকে নিজের অংশ হিসাবে দেখে এবং প্রণালীর ওপর নিজস্ব দাবি করে, যদিও অনেক দেশ তাইওয়ান প্রণালীকে আন্তর্জাতিক জলসীমা হিসেবে মনে করে। সম্প্রতি, চীনের সামরিক বিমানের তাইওয়ান প্রণালী অতিক্রমের ঘটনা উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশের তাইওয়ান প্রণালীতে নৌবাহিনীর উপস্থিতি বৃদ্ধি পেয়েছে। সাম্প্রতিক কালে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স এই জলপথ ব্যবহার করেছে।

সারসংক্ষেপ:

তাইওয়ান প্রণালী ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার কারণে, এর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতার মাধ্যমে এই প্রণালীতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।

তাইওয়ান প্রণালী

• তাইওয়ান প্রণালী চীন ও তাইওয়ানকে পৃথক করে।

• এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও নৌপথ।

• ঐতিহাসিকভাবে বহু যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সাক্ষী।

• বর্তমানে চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু।

• আন্তর্জাতিক জলসীমার দাবির বিষয়।

তাইওয়ান প্রণালী: চীন ও তাইওয়ানের মধ্যবর্তী একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথের ঐতিহাসিক, ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দিক।

ওলন্দাজ পূর্ব ইন্ডিয়া কোম্পানি, কিং রাজবংশ

জেং চেংগোং (কক্সিঙ্গা)

তাইওয়ান দ্বীপ, ফুচিয়েন প্রদেশ, শিয়ামেন, ছুয়ানচৌ, ফুচৌ, কাও-শিয়ুং, পেংহু দ্বীপপুঞ্জ

তাইওয়ান প্রণালী, তাইওয়ান, চীন, জলপথ, ঐতিহাসিক ঘটনা, রাজনীতি, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি

মূল তথ্যাবলী:

  • তাইওয়ান প্রণালী চীন ও তাইওয়ান দ্বীপকে পৃথক করে
  • এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও নৌপথ
  • ঐতিহাসিকভাবে বহু যুদ্ধ ও সংঘর্ষের সাক্ষী
  • বর্তমানে চীন-তাইওয়ান উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু
  • আন্তর্জাতিক জলসীমার দাবির বিষয়

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।