বাংলাদেশের ডেটা সেন্টার: একটি বিস্তারিত আলোচনা
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অভূতপূর্ব অগ্রগতির সাথে সাথে ডেটা সেন্টার বা তথ্যকেন্দ্রের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। একটি ডেটা সেন্টার হলো কম্পিউটার সিস্টেম, টেলিযোগাযোগ সরঞ্জাম এবং ডেটা স্টোরেজ সিস্টেমের আধুনিক স্থাপনা। এটি ব্যবসায়িক ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন ব্যাকআপ ব্যবস্থা, শক্তিশালী বিদ্যুৎ সরবরাহ, জটিল নেটওয়ার্কিং, পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ (এয়ার কন্ডিশনিং, অগ্নি নির্বাপন), এবং উন্নত নিরাপত্তা ব্যবস্থা সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশে ডেটা সেন্টারের ইতিহাস:
বাংলাদেশে ডেটা সেন্টারের উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে নতুন। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ সরকার মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল) প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বঙ্গবন্ধু হাইটেক সিটিতে টিয়ার ফোর গোল্ড ফল্ট টলারেন্ট ডেটা সেন্টার পরিচালনা করে। মোঃ শামসুল আরেফিন এবং জোহরা বেগম যথাক্রমে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন। ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০-এ কোম্পানিটির নিবন্ধন সম্পন্ন হয়। বিডিসিসিএল ডেটা সেন্টার রক্ষণাবেক্ষণ, আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেশন অর্জন এবং ই-সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে।
২০২২ সালে বিডিসিসিএল এবং জেননেক্সট টেকনোলজি লিমিটেড যৌথভাবে ‘মেঘনা ক্লাউড’ নামে বাংলাদেশের প্রথম ক্লাউড ডেটা সেন্টার স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এই প্রকল্পে নতুন গবেষণা ও উন্নয়ন (আরএন্ডডি) কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে।
বিভিন্ন ধরনের ডেটা সেন্টার:
আকার, বিদ্যুৎ চাহিদা, রেডান্ডান্সি এবং গঠন অনুসারে ডেটা সেন্টারের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যেমন অন-সাইট ডেটা সেন্টার, কো-লোকেশন সুবিধা, হাইপারস্কেল ডেটা সেন্টার এবং এজ ডেটা সেন্টার।
ডেটা সেন্টারের গুরুত্বপূর্ণ দিক:
ডেটা সেন্টারের অপারেশনের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, উন্নত নেটওয়ার্কিং, দক্ষ তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, এবং অত্যন্ত শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপরিহার্য। এছাড়াও, ডেটা ব্যাকআপ এবং দুর্যোগ পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। শক্তি দক্ষতা ও পরিবেশগত দায়িত্ববোধও বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ডেটা সেন্টারের ভবিষ্যৎ:
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিংয়ের ব্যাপক ব্যবহার ডেটা সেন্টারের চাহিদা আরও বৃদ্ধি করবে। এই প্রসঙ্গে শক্তি দক্ষতা, নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার, এবং টেকসই অবকাঠামো বিকাশ গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার:
বাংলাদেশে ডেটা সেন্টারের উন্নয়ন দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এই অবকাঠামো দেশের ডিজিটাল অর্থনীতি এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে, শক্তি দক্ষতা, নিরাপত্তা, এবং টেকসইতা বিষয়গুলিতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া অত্যাবশ্যক।