ট্রুং মাই লান

আপডেট: ৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১:৩১ এএম

ট্রুং মাই লান: ভিয়েতনামের ধনকুবের ও বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক জালিয়াতির হোতা

৬৮ বছর বয়সী ট্রুং মাই লান ভিয়েতনামের একজন অত্যন্ত ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন, যিনি বিলাসবহুল বাড়ি, হোটেল এবং বাণিজ্যিক সম্পত্তির মালিক ছিলেন। তার সম্পত্তি ভিয়েতনামের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে ছিল। কিন্তু তার এই বিপুল সম্পদের পেছনে রয়েছে এক ভয়াবহ সত্য। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দেশের একটি ব্যাংককে তার নিজের এটিএম বানিয়ে ফেলেছিলেন এবং খেয়ালখুশিমতো অর্থ লোপাট করেছেন।

২০২৪ সালের এপ্রিলে হো চি মিন সিটির একটি আদালত ১২ বিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ১,০৮০,০০০ কোটি টাকা) আত্মসাতের দায়ে ট্রুং মাই লানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। এই অর্থের পরিমাণ ভিয়েতনামের মোট অর্থনীতির প্রায় ৩ শতাংশ। এই ঘটনায় দেশের আর্থিক খাতে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হয় এবং বিদেশি বিনিয়োগের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তবে, ট্রুং মাই লানের মৃত্যুদণ্ড যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে পরিণত হবে যদি তিনি আত্মসাৎকৃত অর্থের তিন-চতুর্থাংশ (৯ বিলিয়ন ডলার) পরিশোধ করেন। তিনি এই অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করছেন কিনা সেটি এখনও অস্পষ্ট।

ট্রুং মাই লানের ব্যবসায়িক জীবন শুরু হয়েছিল একটি সাধারণ চীনা-ভিয়েতনামি পরিবারে। তিনি হো চি মিন সিটির প্রাচীনতম বাজারে মায়ের সাথে প্রসাধনী বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে তিনি ছোটো ছোটো ব্যবসা শুরু করেন। হংকংয়ের বিনিয়োগকারী এরিক চুয়ের সাথে পরিচয় এবং ১৯৯২ সালে তাঁর সাথে বিয়ে ট্রুং মাই লানের জীবনে নতুন মোড় নিয়ে আসে। তিনি ১৯৯২ সালেই আবাসন কোম্পানি ‘ভ্যান থিন ফ্যাট’ চালু করেন। ২০১১ সালের মধ্যে তিনি হো চি মিন সিটির একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী হয়ে ওঠেন, যদিও তিনি নাম প্রচার করতে পছন্দ করতেন না।

২০২২ সালের অক্টোবরে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার গ্রেফতারের পর সায়গন কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে টাকা তোলার একটা ঢেউ দেখা যায়। তদন্তে উঠে আসে যে, ট্রুং মাই লান ও তার সহযোগীরা হাজার হাজার ভুয়া কোম্পানি খুলে ব্যাংক থেকে ৪৪ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৩,৯৬০,০০০ কোটি টাকা) লোপাট করেছেন। এই ঘটনা মালয়েশিয়ার ওয়ানএমবিডি তহবিল কেলেঙ্কারি ও স্যাম ব্যাংকম্যান-ফ্রাইডের জালিয়াতির চেয়েও বড়। ট্রুং মাই লানের এই কুকীর্তির জন্য দুটি আলাদা বিচারের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। একটিতে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্যটিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। মোট ৮৫ জনকে এই মামলায় বিচার করা হয়।

ট্রুং মাই লান বারবার ক্ষমা চেয়েছেন, কিন্তু তার এই কর্মকাণ্ড ভিয়েতনামের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এই ঘটনা দেখিয়েছে যে, ভিয়েতনামের আর্থিক ব্যবস্থা কতটা ভঙ্গুর হতে পারে এবং দুর্নীতির বিস্তার কতটা ব্যাপক।

ট্রুং মাই লান: ভিয়েতনামের অত্যন্ত ধনী ব্যবসায়ী এবং বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাংক জালিয়াতির মূল অভিযুক্ত।

ট্রুং মাই লানের জালিয়াতি ভিয়েতনামের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে।

তার বিরুদ্ধে ১২ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।

তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ হয়েছে।

ট্রুং মাই লানের জীবন ও ব্যবসায়িক সাফল্যের গল্প অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও জটিল।

মূল তথ্যাবলী:

  • ভিয়েতনামের একজন ধনকুবের নারী ট্রুং মাই লান ১২ বিলিয়ন ডলার আত্মসাতের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হন।
  • তার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল খারিজ হয়ে গেছে।
  • এই ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ ব্যাংক জালিয়াতি হিসেবে চিহ্নিত।
  • ট্রুং মাই লানের জীবনী, ব্যবসায়িক উত্থান ও পতন নিয়ে আলোচনা।
  • ভিয়েতনামের অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এই ঘটনার প্রভাব।

একই নামে একাধিক ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও স্থান থাকতে পারে। সুনির্দিষ্টভাবে জানতে সংবাদ লিংকে প্রবেশ করুন।