টোকিও: পূর্ব এশিয়ার মুক্তা
টোকিও, জাপানের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর, পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলে অবস্থিত। একটি প্রাচীন মৎস্য গ্রাম 'এদো' থেকে টোকিওর উত্থানের গল্প অসাধারণ। ১৬০৩ সালে টোকুগাওয়া শোগুনরা এদোকে তাদের রাজধানী করে নেয়। ১৮৬৮ সালে মেইজি পুনঃপ্রতিষ্ঠার পর কিয়োটো থেকে রাজধানী এদোতে স্থানান্তরিত হয় এবং শহরটির নাম রাখা হয় টোকিও (পূর্ব রাজধানী)।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
টোকিও হোনশু দ্বীপের পূর্ব উপকূলে, টোকিও উপসাগরের মাথায় অবস্থিত। কানতৌ সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত এই মেগাসিটির আয়তন প্রায় ২,৪০০ বর্গকিলোমিটার। টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ, আর বৃহত্তর টোকিও মহানগর এলাকায় বাস করে প্রায় ১ কোটি ৩০ লক্ষের বেশি মানুষ। টোকিও-ইয়োকোহামা মহানগর এলাকা বিশ্বের জনবহুলতম এলাকার মধ্যে একটি।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
টোকিও জাপানের অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, শিল্প ও আর্থিক কেন্দ্র। বিশ্বের অনেক বড় বড় কোম্পানির সদর দপ্তর এখানে অবস্থিত। টোকিওর অর্থনীতি বিশ্বের বৃহত্তম নগর অর্থনীতির মধ্যে একটি। টোকিও স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্টক এক্সচেঞ্জ।
ঐতিহাসিক ঘটনা ও দর্শনীয় স্থান:
১৯২৩ সালের গ্রেট কান্টো ভূমিকম্প ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে টোকিও ক্ষতিগ্রস্ত হলেও, দ্রুত পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে এটি আবার উন্নত হয়েছে। টোকিওতে রয়েছে ঐতিহাসিক এদো-টোকিও জাদুঘর, মেইজি জিঙ্গু মন্দির, সেনসৌ-জি বৌদ্ধ মন্দির, ইম্পেরিয়াল প্যালেস, টোকিও টাওয়ার ও টোকিও স্কাইট্রি টাওয়ার। উয়েনো পার্ক, গিনজা শপিং এলাকা, শিবুয়া ক্রসিং, আকিহাবারা ইলেকট্রনিক্স মার্কেট, হারাজুকু ইত্যাদি দর্শনীয় স্থানগুলি পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
সংস্কৃতি ও উৎসব:
টোকিওতে ঐতিহ্যবাহী জাপানি সংস্কৃতির সাথে আধুনিকতার এক অসাধারণ সমন্বয় দেখা যায়। চেরি ব্লসম উৎসব, সানজা মাতসুরি, সুমিদা নদীর আতশবাজি উৎসব ইত্যাদি উৎসবগুলি টোকিওকে আরও বর্ণিল করে তোলে।
পরিবহন ব্যবস্থা:
টোকিওর পরিবহন ব্যবস্থা বিশ্বমানের। এখানে রয়েছে ব্যাপক রেল নেটওয়ার্ক, মেট্রো, বাস এবং হানেদা ও নারিতা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
শেষ কথা:
আধুনিকতার সাথে ঐতিহ্যের মিশেলে টোকিও আজ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও আকর্ষণীয় মহানগরী। এই মহানগরীটির উন্নয়ন ও ঐতিহ্যের গল্প বিস্ময়কর এবং পর্যটকদের জন্য অনন্য অভিজ্ঞতা উপহার দেয়।