টেলিভিশন: দূরদর্শনের অভূতপূর্ব যাত্রা
টেলিভিশন, বা সংক্ষেপে টিভি, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। গ্রিক শব্দ 'টেলি' (দূর) এবং ল্যাটিন শব্দ 'ভিশন' (দর্শন) মিলিত হয়ে 'টেলিভিশন' শব্দটির উৎপত্তি। এটি এমন এক যন্ত্র যা দূরবর্তী স্থান থেকে ছবি ও শব্দ একযোগে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়। ১৮৬২ সালে তারের মাধ্যমে প্রথম স্থির ছবি পাঠানোর পর ১৮৭৩ সালে মে ও স্মিথ ইলেকট্রনিক সিগনালের মাধ্যমে ছবি প্রেরণের পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। তবে ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন লগি বেয়ার্ড ১৯২৬ সালে প্রথম টেলিভিশন আবিষ্কারের মাধ্যমে এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তিনি সাদা-কালো ছবি দূরবর্তী স্থানে বৈদ্যুতিক সম্প্রচারে পাঠাতে সক্ষম হন। ১৯৩৬ সালে রুশ বংশোদ্ভুত প্রকৌশলী আইজাক শোয়েনবারগের অবদানে বিবিসি প্রথম টিভি সম্প্রচার শুরু করে। ১৯৪০ সালে টেলিভিশন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চালু হয় এবং ১৯৪৫ সালে এটি পূর্ণতা লাভ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর টেলিভিশনের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়, এবং গত শতাব্দীর ৫০ এর দশকে এটি গণমাধ্যমের একটি মুখ্য অংশ হিসেবে উঠে আসে।
টেলিভিশনের মূল ধারণা হলো শব্দ ও ছবিকে বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে ট্রান্সমিট করা। এর জন্য টিভি ক্যামেরা, ট্রান্সমিটার এবং টিভি সেট (রিসিভার) - এই তিনটি প্রযুক্তির সমন্বয় প্রয়োজন। ক্যামেরা শব্দ ও ছবিকে তড়িৎ-চৌম্বকীয় সংকেতে রূপান্তর করে, ট্রান্সমিটার এই সংকেত বেতার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে, এবং টিভি সেট এই সংকেত গ্রহণ করে তাকে আবার ছবি ও শব্দে রূপান্তরিত করে। এনালগ টিভি ক্যামেরা সাধারণত ৫২৫ লাইনে ছবির পিক্সেল ভাগ করে প্রেরণ করে। ডিসপ্লে প্রযুক্তির ভিত্তিতে টিভিকে বিভিন্ন ধরণে ভেদ করা যায়, যেমন: CRT, প্লাজমা, LCD, LED ইত্যাদি। সম্প্রচার পদ্ধতির ভিত্তিতে আছে এনালগ, ডিজিটাল (DTV) এবং HDTV। এনালগ টিভির PAL স্ট্যান্ডার্ডে ছবির রেজোলিউশন (720×576) এবং aspect ratio 4:3।
আজকের ডিজিটাল যুগে HDTV এবং Ultra HD যুক্ত টিভি সেট সাধারণ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট এবং অনলাইন স্ট্রিমিং সার্ভিসের উত্থান টিভি দেখার পদ্ধতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। অনেক সংস্থা এখন অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য ভিডিও কন্টেন্ট সরবরাহ করে। টেলিভিশন শুধু একটি যন্ত্র নয়, এটি একটি শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যম যা সারা বিশ্বের জনগোষ্ঠীকে একত্রিত করে।