টিপু সুলতান (২০ নভেম্বর, ১৭৫০ - ৪ মে, ১৭৯৯) ছিলেন দক্ষিণ ভারতের মহীশূর রাজ্যের একজন বিখ্যাত শাসক এবং বীর যোদ্ধা। তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধে বারবার যুদ্ধ করেছিলেন এবং তাঁর অসাধারণ সাহসিকতা ও সামরিক দক্ষতার জন্য "মহীশূরের বাঘ" নামে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। টিপু সুলতান মহীশূর রাজ্যের সেনাপতি হায়দার আলীর পুত্র ছিলেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই সামরিক ও কূটনৈতিক দক্ষতায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন এবং তার পিতার সঙ্গে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
১৭৮২ সালে, তার পিতার মৃত্যুর পর, টিপু সুলতান মহীশূরের শাসক হন। তার শাসনামল বৈচিত্র্যপূর্ণ ছিল। তিনি রাজ্যের সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রশাসনিক সংস্কার, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও রেশম শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি একটি নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা এবং ক্যালেন্ডারও চালু করেছিলেন। তবে, টিপু সুলতানের ধর্মীয় নীতি ও রাজনৈতিক কৌশল নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন তিনি ধর্মীয় সহনশীলতা দেখানোর চেষ্টা করেছেন, আবার অন্যরা তাকে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের দায়ে অভিযুক্ত করেছেন।
টিপু সুলতান ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে তিনটি প্রধান যুদ্ধে জড়িত ছিলেন। দ্বিতীয় অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধের পর ম্যাঙ্গালোর চুক্তির মাধ্যমে একটা সাময়িক শান্তি স্থাপিত হয়। কিন্তু শীঘ্রই তৃতীয় এবং চতুর্থ অ্যাংলো-মহীশূর যুদ্ধ হয়। চতুর্থ ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে(১৭৯৯ সালে) টিপু সুলতান শ্রীরঙ্গপট্টনমের যুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর কাছে পরাজিত ও নিহত হন। তাঁর মৃত্যুতে মহীশূর রাজ্যের স্বাধীনতা বিলুপ্ত হয় এবং ব্রিটিশদের অধীনে চলে যায়।
আজও টিপু সুলতানকে নিয়ে বিতর্ক চলছে। একদিকে তাকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বীর পুরুষ হিসেবে দেখা হয়, আবার অন্যদিকে তাকে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ও নিপীড়নের জন্যও সমালোচিত করা হয়।