বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নীতিমালা ২০২৪: একটি বিশ্লেষণ
বাংলাদেশের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই জটিলতা বিরাজ করছে। অবাধ ও লাগামছাড়া ফি আদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নতুন একটি নীতিমালা প্রণয়ন করেছে, যা ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (স্কুল, স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তর)-এর টিউশন ফি নীতিমালা, ২০২৪’ নামে অভিহিত হবে। ৩ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ কর্তৃক এই নীতিমালার পরিপত্র জারি করা হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জুবায় ২৭ অক্টোবর এতে স্বাক্ষর করেন।
নীতিমালার মূল বিষয়াবলী:
এই নীতিমালা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন সব এমপিওভুক্ত ও নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রযোজ্য। নীতিমালায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবস্থান, ধরন এবং অভিভাবকদের সামাজিক-আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে মাসিক বেতন বা টিউশন ফি নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। মহানগর ও জেলা পর্যায়ে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করা হবে যারা এই ফি নির্ধারণ করবে।
মহানগর কমিটি: মহানগর কমিটিতে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (শিক্ষা ও আইসিটি/সার্বিক) সভাপতি এবং আঞ্চলিক উপপরিচালক (মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর) সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন। কমিটিতে থাকবে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি, এমপিও ও নন-এমপিওভুক্ত কলেজ ও স্কুলের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।
জেলা কমিটি: জেলা কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সদস্য সচিব হিসেবে থাকবেন। এছাড়াও কমিটিতে থাকবে উপজেলা পর্যায়ে এমপিও ও নন-এমপিওভুক্ত কলেজ ও স্কুলের অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষক এবং উপজেলা/থানা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রতিনিধি নির্বাচন করে কমিটিকে অবহিত করবেন।
কমিটির কর্মপরিধি:
- কমিটি আওতাভুক্ত এলাকার এমপিও/নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি নির্ধারণ করা।
- প্রতি বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের জন্য টিউশন ফি নির্ধারণ করা।
- দরিদ্র ও অসহায় শিক্ষার্থীদের জন্য ফুল ফ্রি/হাফ ফ্রি ব্যবস্থা করা।
- নির্ধারিত ফি আদায়ের তদারকি করা।
- টিউশন ফি সংক্রান্ত তথ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে প্রদর্শন করা।
- ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত ফি ও প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা।
হিসাব সংরক্ষণ:
মাসিক বেতন/টিউশন ফি এবং অন্যান্য আয় তফসিলী ব্যাংকে রাখতে হবে। যদি কোনো একক খাতে বাৎসরিক আয় ১০ লক্ষ টাকার বেশি হয়, তবে আলাদা ব্যাংক হিসাব খুলতে হবে। আয় খাতভিত্তিক ব্যয় করতে হবে এবং এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে না।
এই নীতিমালা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি প্রসঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।