জৈব কৃষি

জৈব কৃষি: টেকসই ভবিষ্যতের পথিকৃৎ

জৈব কৃষি, একটি কল্যাণমূলক কৃষি পদ্ধতি যা প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও পরিবেশের সুরক্ষা নিশ্চিত করে। কৃত্রিম রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব সার, শস্যচক্র, জৈব কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার করে জৈব কৃষি উচ্চমানের পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করে। এই পদ্ধতি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, পানি সংরক্ষণ, জীববৈচিত্র্য রক্ষা এবং মানুষের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

  • *ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট:** ২০ শতকের শুরুতে রাসায়নিক কৃষির বিরূপ প্রভাবের জন্য জৈব কৃষির উদ্ভব ঘটে। ১৯৭২ সালে আন্তর্জাতিক জৈব কৃষি আন্দোলন সমূহের সংঘ (IFOAM) এর প্রতিষ্ঠা জৈব কৃষির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • *জৈব কৃষির নীতি:** আন্তর্জাতিক জৈব কৃষি সংঘ চারটি মূল নীতির উপর জোর দেয়: স্বাস্থ্য, পরিবেশবান্ধবতা, ন্যায়সঙ্গততা এবং যত্ন। জৈব কৃষি মাটি, উদ্ভিদ, প্রাণী ও মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন এবং পরিবেশের সংরক্ষণে অবদান রাখে।
  • *কীভাবে কাজ করে:** জৈব কৃষিতে জৈব সার (কম্পোস্ট, গোবর), শস্যচক্র, প্রাকৃতিক কীটনাশক, সাথী ফসল চাষ, কীটপতঙ্গভূক প্রাণীর ব্যবহার ইত্যাদি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। কৃত্রিম রাসায়নিক সার, কীটনাশক, বংশানুগতভাবে পরিবর্তিত জীব (GMO) এবং অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার নিষিদ্ধ।
  • *উপকারিতা:** জৈব কৃষি পরিবেশ দূষণ কমায়, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে এবং পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন করে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতি ও জনসাধারণের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে অবদান রাখে।
  • *সমস্যা:** জৈব কৃষির উচ্চ উৎপাদন ব্যয়, ফলনের কম পরিমাণ এবং বাজারজাতকরণের সমস্যা এর মূল প্রতিবন্ধকতা।
  • *বাজার:** ১৯৯০ সাল থেকে জৈব খাদ্যের বাজার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১২ সালে এর মূল্য ছিল প্রায় ৬৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭.৫ কোটি হেক্টর জমিতে জৈব কৃষি করা হয়েছে, যা বিশ্বের মোট আবাদী জমির ১.৬%।
  • *ভবিষ্যৎ:** জৈব কৃষির বিকাশে সরকারি সহায়তা, গবেষণা এবং নবীকরণ অত্যাবশ্যক। ভবিষ্যতে জৈব কৃষির মাধ্যমে টেকসই খাদ্য উৎপাদন ও পরিবেশ সংরক্ষণ সাধিত হবে।

মূল তথ্যাবলী:

  • জৈব কৃষি প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিত করে।
  • কৃত্রিম রাসায়নিকের পরিবর্তে জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করে উচ্চমানের খাদ্য উৎপাদন করে।
  • মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, পানি সংরক্ষণ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • পরিবেশ দূষণ কমায় এবং মানুষের স্বাস্থ্যের উন্নয়নে অবদান রাখে।
  • উচ্চ উৎপাদন ব্যয় ও ফলনের কম পরিমাণ এর প্রধান প্রতিবন্ধকতা।