জাতীয় প্রেসক্লাব: বাংলাদেশের সাংবাদিকদের এক অমূল্য নিদর্শন
জাতীয় প্রেসক্লাব বাংলাদেশের সাংবাদিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন, যা দেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে গভীরভাবে জড়িত। ১৯৫৪ সালের ২০ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান প্রেসক্লাব হিসেবে যাত্রা শুরু করে, ১৯৭২ সালে এর নামকরণ হয় জাতীয় প্রেসক্লাব। প্রতিষ্ঠার সময় ১৮ তোপখানা রোডের একটি লাল ভবনে কার্যক্রম শুরু করে, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কোয়ার্টার এবং বিখ্যাত বিজ্ঞানী সত্যেন্দ্রনাথ বসুর বাসস্থান ছিল।
প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠায় অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব ইন্ডিয়ার পি.এম. বালান, দৈনিক সংবাদের খায়রুল কবির, সৈয়দ নূরুদ্দিন, সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেন, আব্দুস সালাম, এ.এম.এ. আজিম, আব্দুল মতিন-সহ অনেক গুণী সাংবাদিকের অবদান রয়েছে। প্রথম সভাপতি ছিলেন মুজিবুর রহমান খাঁ এবং প্রথম সম্পাদক ছিলেন জহুর হোসেন চৌধুরী।
প্রাথমিকভাবে প্রায় ৫০ জন সদস্য নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রেসক্লাব, ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে প্রায় ৮০০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত। এতে জীবন, স্থায়ী ও সহযোগী সদস্যপদ রয়েছে। ১৯৬১ সালে সাংবাদিকদের প্রথম ওয়েজ বোর্ড গঠিত হওয়ার পর প্রেসক্লাবের গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পায়।
১৯৭৫ সালে সচিবালয় সম্প্রসারণের জন্য প্রেসক্লাবের স্থানান্তরের চেষ্টা করা হয়, কিন্তু প্রেসক্লাব সদস্যদের প্রতিবাদে তা সফল হয়নি। ১৯৭৯ সালে বর্তমান স্থানে একটি আধুনিক ভবন নির্মিত হয়, যেখানে দুটি অডিটোরিয়াম, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন, টিভি কক্ষ, অতিথিশালা এবং সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার রয়েছে।
জাতীয় প্রেসক্লাব কেবল সাংবাদিকদের ক্লাব নয়; বরং দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ও সামাজিক আন্দোলনে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গাবিরোধী মিছিল, ১৯৬৭ সালের রবীন্দ্রসঙ্গীত নিষিদ্ধের প্রতিবাদ, স্বাধীনতা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্র রক্ষায় প্রেসক্লাব সবসময়ই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী প্রেসক্লাব ভবনে মর্টারশেল নিক্ষেপ করেছিল। আজও জাতীয় প্রেসক্লাব বাংলাদেশের সাংবাদিকদের জন্য এক স্মরণীয় ও গর্বের স্থান।