বাংলাদেশে জমিসংক্রান্ত বিরোধ একটি ব্যাপক ও জটিল সমস্যা, যা প্রায়শই পরিবার, সম্প্রদায় এবং এমনকি জাতীয় স্তরেও সহিংসতা ও দুর্ভোগের সৃষ্টি করে। এই প্রবন্ধে আমরা বিভিন্ন উদাহরণের মাধ্যমে এই সমস্যার বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরবো।
লক্ষ্মীপুরের হত্যাকাণ্ড: লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার খাসেরহাট গ্রামে তৌহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির পরিবার পূর্বপুরুষের জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিরোধের শিকার। এই বিরোধের জের ধরে তাঁর বাবা ও ভাইকে হত্যা করা হয় ২০১৮ সালে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে আদালত প্রতিপক্ষ পরিবারের ৫ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে। এই ঘটনায় দুই পরিবারই গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
রাজশাহীর পলাতক ব্যক্তি: রাজশাহীতে এক ব্যক্তি পাঁচ বছর ধরে পূর্বপুরুষের জমি নিয়ে বিরোধের জেরে পলাতক। তাঁর স্ত্রী জানান, তাঁর স্বামী পলাতক থাকায় পরিবারটি অত্যন্ত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে, সন্তানদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গেছে।
ঢাকার দেউলিয়া পরিবার: ঢাকার এক পরিবার তাদের জমি নিয়ে মামলা করার ফলে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। চাচারা তাদের সম্পত্তি দখল করে নেওয়ার পর তারা গ্রামে ফিরতে পারছে না এবং ঢাকায় জীবনধারণ করা তাদের কাছে কঠিন হয়ে উঠেছে।
গবেষণা ও পরিসংখ্যান: বাংলাদেশ পিস অবজারভেটরি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের গবেষণায় দেখা গেছে যে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে জমিসংক্রান্ত বিরোধে প্রায় আড়াই হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২০২০ সালে ছিল সবচেয়ে বেশি (৬৩৩)। প্রতি ১৭টি খুনের মধ্যে একটি এবং প্রতি ২০টি হামলার মধ্যে একটি জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে ঘটেছে। প্রায় ৫০ লক্ষ পরিবার এই বিরোধের মধ্যে রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
কারণ: অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের মতে, বাংলাদেশের কৃষিপ্রধান অর্থনীতি ও ভূমি ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও অনিয়ম জমিসংক্রান্ত বিরোধের মূল কারণ। জমির প্রতি মানুষের আবেগ ও সম্পর্কও এই বিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
উপসংহার: জমিসংক্রান্ত বিরোধ একটি জটিল সমস্যা যা বাংলাদেশের অনেক পরিবারের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এই সমস্যার সমাধানের জন্য দক্ষ ভূমি ব্যবস্থাপনা, আইনি সহায়তা এবং সামাজিক সচেতনতা অপরিহার্য। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এই সমস্যা সমাধানে সরকার ও সমাজের সকল স্তরের মানুষ সক্রিয় ভূমিকা পালন করবে।