জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং: বাংলাদেশের কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র
১৯৯২ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলায় মোঃ ওলি উল্লাহ প্রতিষ্ঠিত জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং, দেশের কৃষি খাতে অভূতপূর্ব অবদান রাখছে। দারিদ্র্যের অন্ধকার থেকে উঠে এসে নিজের অদম্য প্রচেষ্টা ও উদ্ভাবনী প্রতিভার মাধ্যমে ওলি উল্লাহ গড়ে তুলেছেন একটি আদর্শ প্রতিষ্ঠান।
প্রতিষ্ঠার প্রথম দিকে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং মূলত প্যাডেল থ্রেশার ও গরুর লাঙলের ফলা তৈরির কাজ করত। কিন্তু ওলি উল্লাহর স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। তিনি চেয়েছিলেন কৃষকদের জন্য আধুনিক ও দক্ষ কৃষিযন্ত্র তৈরি করে তাদের জীবনমান উন্নত করতে। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে, বারি ও ব্রি’র সাথে সহযোগিতা করে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং ক্রমশ উন্নতমানের কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি শুরু করে।
আজ জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পণ্য তালিকায় রয়েছে বিভিন্ন ধরণের কৃষি যন্ত্র, যেমন সিডার, বেডপ্লান্টার, আলু তোলা, ভুট্টামাড়াই, ধান-গমমাড়াই মেশিন, বিভিন্ন রকম স্প্রে, বাগান পরিচর্যায় আগাছা দমনের জন্য মিনি টিলার, পাশাপাশি গরু-ছাগল ও হাঁস-মুরগির খামারের যন্ত্র, মাছের খামারের যন্ত্র, এমনকি বেকারির কিছু মেশিনও। বাজারের চাহিদা বিবেচনা করে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতি বছর নতুন নতুন কৃষি যন্ত্র তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের মধ্যে রয়েছে কম্বাইন হারভেস্টার উৎপাদন। এই যন্ত্রটি এককালে দেশে আমদানি নির্ভর ছিল। জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের কম্বাইন হারভেস্টার উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের কৃষকরা কম খরচে উন্নতমানের যন্ত্র পেতে পারছেন। তাদের তৈরি কম্বাইন হারভেস্টার আমদানি করা যন্ত্রের চেয়ে অনেক কম দামে কৃষকদের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।
ওলি উল্লাহর নেতৃত্বে জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রতিটি পদক্ষেপই কৃষক কেন্দ্রিক। তারা কৃষকদের সরাসরি ঋণ সহায়তা, প্রযুক্তিগত পরামর্শ এবং প্রশিক্ষণ দিয়ে কৃষিক্ষেত্রে আধুনিকীকরণের কাজ করছে। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর সাথেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে থাকে।
জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সফলতার পেছনে ওলি উল্লাহর অদম্য ইচ্ছাশক্তি, অক্লান্ত পরিশ্রম, এবং দেশের কৃষকদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। এছাড়াও বারি, ব্রি, ইউএসএইড, সিমিট, ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এন্টারপ্রাইজ-এর মতো সংস্থার সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। জনতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাফল্যের গল্প বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য এক অনুপ্রেরণা।