জগন্নাথ হল: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্য ও ইতিহাস
১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে তিনটি আবাসিক হলের মধ্যে একটি হল জগন্নাথ হল। মানিকগঞ্জের বালিয়াটির জমিদার কিশোরীলাল রায় চৌধুরীর পিতা জগন্নাথ রায় চৌধুরীর নামানুসারে এই হলের নামকরণ করা হয়। প্রাথমিকভাবে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত হলেও বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের অমুসলিম শিক্ষার্থীরা এখানে বসবাস করে।
প্রভোস্টগণ ও ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব:
জগন্নাথ হলের প্রথম প্রভোস্ট ছিলেন অধ্যাপক নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত। পরবর্তীতে বিখ্যাত অধ্যাপক সত্যেন্দ্রনাথ বসু, অধ্যাপক জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব, এবং অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা এই হলের প্রভোস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব ও অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী হত্যা করে।
ভবন:
জগন্নাথ হলে মোট চারটি ভবন রয়েছে। ১৯৮৫ সালের ১৫ই অক্টোবর একটি আবাসিক ভবনের ছাদ ধসে পড়লে ৩৯ জন শিক্ষার্থী, কর্মচারী ও অতিথির মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনার স্মরণে ঐ দিনটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শোক দিবস হিসেবে পালন করা হয় এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের স্থলে 'অক্টোবর স্মৃতি ভবন' নির্মিত হয়।
মুক্তিযুদ্ধ ও অন্যান্য ঘটনা:
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ মধ্যরাতের পর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানে জগন্নাথ হলও আক্রান্ত হয়, যেখানে অনেক আবাসিক শিক্ষার্থী ও কর্মচারী নিহত হয়। এছাড়াও, ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর পাকিস্তানি সরকার কিছু সময় জগন্নাথ হলের ভবনগুলোকে বিভিন্ন প্রশাসনিক কাজে ব্যবহার করেছিল।
বর্তমান অবস্থা:
জগন্নাথ হল বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক হল। হলের উন্নয়ন ও সংস্কার কার্যক্রম অব্যাহত আছে। আবাসিক ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে নতুন নতুন ভবন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
আরো তথ্য:
জগন্নাথ হল সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্যের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।