ঘাটাইল: টাঙ্গাইলের একটি ঐতিহ্যবাহী উপজেলা
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হল ঘাটাইল। টাঙ্গাইল শহর থেকে ৩৩ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে এবং রাজধানী ঢাকা থেকে ১১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত এই উপজেলাটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অপরিসীম। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, ঘাটাইলের জনসংখ্যা প্রায় ৪১৭,৯৩৯ জন, যার মধ্যে পুরুষ ২০৫,৪৩৬ এবং মহিলা ২১২,৫০৩ জন।
ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
ঘাটাইল উপজেলার আয়তন ৪৫১.৩০ বর্গ কিমি। উত্তরে গোপালপুর ও মধুপুর, দক্ষিণে কালিহাতি ও সখীপুর, পূর্বে ফুলবাড়িয়া ও ভালুকা এবং পশ্চিমে ভূঞাপুর ও গোপালপুর উপজেলা অবস্থিত। বংশী, ঝিনাই এবং লৌহজং নদী ঘাটাইলের প্রধান জলাশয়। এছাড়াও, সাধিকা বিল, মাছরা বিল, বড় বিল ও ঘাটাইল বিল উল্লেখযোগ্য। দেওপাড়া, ধলাপাড়া ও সাগরদীঘি পাহাড় এখানকার দর্শনীয় স্থান।
অর্থনীতি:
ঘাটাইলের অর্থনীতি মূলত কৃষি নির্ভর। ধান, পাট, আখ, সরিষা, ডাল, আদা, হলুদ, বাদাম, শাকসবজি প্রধান কৃষি ফসল। আনারস, কাঁঠাল, আনারস, কলা, পেঁপে, তরমুজ, জাম প্রধান ফলমূল। এছাড়াও, মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার রয়েছে। বিভিন্ন কুটির শিল্প যেমন স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বাঁশ ও বেতের কাজও এখানে বিকাশে রয়েছে।
ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
ঘাটাইলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। ১৭৯২ সালে নির্মিত গালা জামে মসজিদ একটি উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা। মুক্তিযুদ্ধে ঘাটাইলের মাটিকান্দিতে হাবিবুর রহমান বীর বিক্রমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি অস্ত্র-গোলাবারুদ বোঝাই একটি জাহাজ দখল করে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতি:
ঘাটাইল উপজেলার গড় সাক্ষরতা হার ৪৪%। এখানে ঘাটাইল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ঘাটাইল ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, পাকুটিয়া পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ব্রাহ্মণশাসন মহিলা কলেজ, জিবিজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। সংস্কৃতির দিক থেকে ঘাটাইল সমৃদ্ধ। এখানে বিভিন্ন ক্লাব, লাইব্রেরি, মহিলা সমবায় সমিতি এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন রয়েছে।
উপসংহার:
ঘাটাইল একটি ঐতিহ্যবাহী, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনাবলী এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।