গ্রোজনী: চেচনিয়ার রক্তাক্ত ইতিহাসের এক অধ্যায়
চেচনিয়া, রাশিয়ার উত্তর ককেশাস অঞ্চলে অবস্থিত একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রজাতন্ত্র। এর রাজধানী গ্রোজনী। এই শহরটি চেচনিয়া ও রাশিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা দ্বন্দ্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত। নব্বইয়ের দশকের দুটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, বেসলান স্কুল সংকট এবং মস্কো থিয়েটারের জিম্মি সংকট – এই সকল ঘটনায় গ্রোজনীর নাম জড়িত থাকার কারণে এটি বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। তবে গ্রোজনী শুধুমাত্র সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িত নয়, এটি চেচেনদের ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
চেচেন জনগোষ্ঠী শতাব্দী ধরে রাশিয়ার আধিপত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে আসছে। সোভিয়েত কালে তাদেরকে জোরপূর্বক কাজাখস্তানে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরে চেচেনরা স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন জোহার দুদায়েভ। এই সময় গ্রোজনী চেচেন বিদ্রোহীদের মুখ্য কেন্দ্র হিসাবে উঠে আসে।
প্রথম চেচেন যুদ্ধ:
১৯৯৪ সালে রাশিয়া চেচনিয়ায় সামরিক অভিযান চালায়। গ্রোজনী যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। গুরুতর বোমাবর্ষণ ও যুদ্ধের কারণে শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। চেচেন বিদ্রোহীরা তাদের সামরিক দক্ষতা দেখিয়ে রাশিয়ান সৈন্যদের ব্যাপক ক্ষতি করে। যুদ্ধ শেষে গ্রোজনী চেচেনদের নিয়ন্ত্রণে ফিরে আসে।
দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ:
১৯৯৯ সালে রাশিয়া আবার চেচনিয়ায় সামরিক অভিযান চালায়। গ্রোজনী আবারও যুদ্ধের মুখোমুখি হয়। শহরটি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২০০০ সালে রাশিয়ান বাহিনী গ্রোজনী দখল করে।
পরবর্তী সময়:
২০০৩ সালে রাশিয়াপন্থী আখমাদ কাদিরভ চেচনিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তার পরে গ্রোজনীতে শান্তি ফিরে আসে। তবে এই শহর এখনও অস্থিরতার আশঙ্কায় জর্জরিত।
জনসংখ্যা ও ভৌগোলিক অবস্থান:
গ্রোজনী চেচনিয়ার কেন্দ্রীয় অংশে সুনের তীরে অবস্থিত। এটি পর্বতমালায় ঘেরা একটি শহর। শহরটির জনসংখ্যা প্রায় ৩০০,০০০ । এখানকার জনগোষ্ঠীর অধিকাংশই চেচেন ।
অর্থনীতি:
গ্রোজনীর অর্থনীতি মূলত কৃষিকর্ম ও সামান্য কারখানার উপর নির্ভরশীল। যুদ্ধের কারণে এর অর্থনীতি গুরুতর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
- গ্রোজনী চেচনিয়ার রাজধানী।
- চেচনিয়া-রাশিয়া যুদ্ধের কেন্দ্রবিন্দু।
- গুরুতর বোমাবর্ষণ ও যুদ্ধের কারণে শহরটি বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
- চেচেন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।