খাল (Canal): মানবসৃষ্ট জলপথ
খাল হলো মানুষের তৈরি পানির গতিপথ, যা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়। এগুলি সাধারণত দুই প্রকার: সেচ ও নৌ-পরিবহণ খাল। সেচ খাল কৃষিকাজে পানি সরবরাহের জন্য তৈরি হয়, আর নৌ-পরিবহণ খাল জাহাজ, নৌকা চলাচলের জন্য। তবে কিছু খাল দুটো উদ্দেশ্যেই ব্যবহৃত হতে পারে।
প্রাচীনকাল থেকেই খাল নির্মাণের ইতিহাস:
খাল নির্মাণের ইতিহাস বহু প্রাচীন। মেসোপটেমিয়ায় খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দে সেচের জন্য প্রথম খাল তৈরির প্রমাণ পাওয়া যায়। পরে মিশরে, চীনে, ভারতে ও অন্যান্য সভ্যতায় ব্যাপকভাবে খাল তৈরি হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দে ইন্দুস উপত্যকার সভ্যতায় উন্নত সেচ ব্যবস্থা ছিল, যেখানে জলধারণের জন্য জলাধারও তৈরি করা হতো। প্রাচীন চীনে বসন্ত ও শরৎ কালে (৮ম-৫ম শতাব্দী খ্রিস্টপূর্ব) নদী পরিবহনের জন্য বৃহৎ খাল তৈরি হয়েছিল। সুয়েজ খাল (১৮৬৯) এবং পানামা খাল (১৯১৪) আধুনিক নৌপরিবহনের দুটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
বাংলাদেশে খাল:
বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে সেচ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে খাল ব্যবহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে খাল ব্যবস্থা পরিচালনা করে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ, মেঘনা-ধনাগোদা, তিস্তা, মুহুরী প্রভৃতি সেচ প্রকল্পের আওতায় ব্যাপক খাল নেটওয়ার্ক রয়েছে। কিছু খাল, যেমন মাদারীপুর বিল রুট, নৌ-পরিবহণেও ব্যবহৃত হয়।
খাল নির্মাণের প্রযুক্তি:
খাল খননের জন্য পানির সহজলভ্যতা, ভূ-প্রকৃতি (ঢাল, উচ্চতা) বিবেচনা করা হয়। সরু সেচ খালে পানি দ্রুত প্রবাহিত হয়। বড় নৌচলাচল খালের তীর রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জলকপাট, লক, তীরবন্ধনী ইত্যাদি খালের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
খালের আধুনিক ব্যবহার:
আধুনিক সময়ে খালের ব্যবহার শুধুমাত্র সেচ ও নৌ-পরিবহণে সীমাবদ্ধ নেই। অনেক শহরের সৌন্দর্য বর্ধনের অংশ হিসেবে খাল ব্যবহৃত হয় (ভেনিস, আমস্টারডাম)। কিছু খাল পানি বিদ্যুৎ উৎপাদনেও ব্যবহৃত হয়। আবার কিছু খাল উপকূলীয় এলাকায় পানি নিষ্কাশনে সহায়তা করে। সম্প্রতি ফাইবার অপটিক কেবল স্থাপনের জন্যও খাল ব্যবহারের প্রচলন দেখা দিয়েছে।