আঠারো শতকে বাংলায় মারাঠা হামলা একটি ভয়াবহ অধ্যায়। মুগল-মারাঠা দ্বন্দ্বের পরিণতিস্বরূপ এই হামলা সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞের সৃষ্টি করে, জনজীবনে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ নিয়ে আসে। ‘বর্গী’ নামে পরিচিত মারাঠা সৈন্যরা ১৭৪২ সাল থেকে ১৭৫১ সাল পর্যন্ত বাংলায় বার বার আক্রমণ চালায়। মারাঠা নেতা ভাস্কর পন্ডিতের নেতৃত্বে ১৭৪২ সালের এপ্রিলে বর্ধমান আক্রমণ করে মারাঠা বাহিনী। তারা রসদ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে, লুণ্ঠন ও ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। নওয়াব আলীবর্দী খান প্রতিরোধ গড়ে তুললেও, মীর হাবিবের বিশ্বাসঘাতকতা মারাঠাদের সহায়তা করে। মুর্শিদাবাদ আক্রমণ করে তারা প্রচুর সম্পদ লুণ্ঠন করে। জগৎ শেঠ পরিবারের কাছ থেকে তিন লক্ষ টাকা আদায় করা হয়। আলীবর্দী কৌশলীভাবে মারাঠাদের পরাজিত করার চেষ্টা করেন এবং ১৭৪২ সালের সেপ্টেম্বরে কাটোয়ায় একটি অতর্কিত আক্রমণ চালায় এবং মারাঠা বাহিনীকে পরাজিত করে। তবে, পরবর্তীতেও মারাঠাদের হামলা অব্যাহত থাকে। রঘুজী ভোঁসলে এবং পেশোয়া বালাজি বাজিরাওয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে বাংলায় মারাঠা উপস্থিতি বারবার উত্থান-পতন করে। ১৭৪৩ সালে পেশোয়া ও আলীবর্দীর মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার ফলে কিছু সময়ের জন্য শান্তি ফিরে আসে। তবে, ১৭৪৪ সালে ভাস্কর পন্ডিতকে হত্যা করে আলীবর্দী মারাঠাদের বিরুদ্ধে একটি কৌশলী পদক্ষেপ নেন। ১৭৪৬-১৭৫০ সাল পর্যন্ত উড়িষ্যা ও বাংলায় যুদ্ধবিগ্রহ চলতে থাকে। আলীবর্দী কখনও কখনও মারাঠাদের পরাজিত করেন, আবার অনেক সময় তাদের কাছে পরাজিত হন। শেষ পর্যন্ত মীর হাবিবের মৃত্যুর পর উড়িষ্যা পুনরায় মারাঠাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ঘন ঘন হামলার ফলে বাংলার অর্থনীতি ধ্বংস হয়, জনগণের অকথ্য দুর্ভোগের সম্মুখীন হয়। এই হামলাগুলি বাংলার ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।
Loading...
© ২০২৪ অটোমাইন্ড আইটি, সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত.