কুরআন মজিদ ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, যা মুসলমানদের বিশ্বাসে আল্লাহর বাণী। এটি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ হয়েছে এবং আরবি সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে মনে করা হয়। কুরআন মোট ১১৪টি সূরা এবং প্রায় ৬,২৩৬টি আয়াতে বিভক্ত। ৬০৯ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ (সাঃ) এর ৪০ বছর বয়সে প্রথম আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে, মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর সাথে সাথে এর অবতরণ সম্পূর্ণ হয়। মুসলমানরা বিশ্বাস করে যে, কুরআন হলো মুহাম্মদ (সাঃ) এর নবুয়তের প্রমাণ এবং ঐশ্বিক বার্তার চূড়ান্ত পর্যায়।
ইসলামী ঐতিহ্য অনুযায়ী, কুরআন তেঁইশ বছর ধরে খণ্ড খণ্ড অংশে মুহাম্মদ (সাঃ) এর নিকট জিবরাইলের মাধ্যমে অবতীর্ণ হয়। প্রাথমিকভাবে কুরআনের আয়াতগুলি খেজুরের ডাল, হাড় ইত্যাদিতে লেখা হত। মুহাম্মদ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর, খলিফা আবু বকর (রাঃ) এর আমলে যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ) কুরআন সংকলন করেন। তৃতীয় খলিফা উসমান (রাঃ) এর আমলে কুরআনের একক সংস্করণ প্রস্তুত এবং বিতরণ করা হয় যা আজও মুসলমানদের ধর্মীয় জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
কুরআন শুধুমাত্র ধর্মীয় নিয়মাবলী নয়, বরং জীবনের সকল দিকে পথনির্দেশনা প্রদান করে। এতে আল্লাহর একত্ববাদ, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা, সামাজিক ন্যায়বিচার, ইত্যাদি বিষয় বর্ণিত আছে। কুরআনের অনেক আয়াতে প্রাকৃতিক ঘটনা এবং ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ রয়েছে। মুসলিমদের বিশ্বাস, কুরআন অপরিবর্তনীয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত এর বার্তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। কুরআনের অনেকগুলি নামের মধ্যে চারটি বিশেষ নাম হল আল-কুরআন, আল-ফুরকান, আল-কিতাব ও আয-যিক্'র। কুরআন বিশ্বের অনেক ভাষায় অনুবাদিত হয়েছে, যদিও অনেকেই মনে করেন আরবীতে কুরআনের মূল সৌন্দর্য ও তাৎপর্য বোঝা যায়। কুরআনের তেলাওয়াত ও এর তাজবিদ (সঠিক উচ্চারণ) ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
সারসংক্ষেপে, কুরআন ইসলাম ধর্মের হৃদয়, জীবনের পথপ্রদর্শক এবং মুসলমানদের জন্য ঐশ্বিক আদর্শ। এটি শুধুমাত্র একটি ধর্মগ্রন্থ নয়, বরং ইতিহাস, সাহিত্য ও সংস্কৃতির একটি অমূল্য সম্পদ।