কোটালিপাড়া: ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও বর্তমান রূপ
বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলায় অবস্থিত কোটালিপাড়া, একটি নাম যা ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং বর্তমানের উন্নয়নের সাথে জড়িত। এই লেখায় আমরা কোটালিপাড়ার ঐতিহাসিক পটভূমি, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, জনসংখ্যা এবং সাম্প্রতিক অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
ঐতিহাসিক কোটালিপাড়া:
প্রাচীনকালে চন্দ্রবর্মণকোট নামে পরিচিত কোটালিপাড়া ছিল একটি দুর্গ নগর। গোপালগঞ্জ জেলার ২৮ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে ঘাগর নদীর তীরে অবস্থিত এই দুর্গনগর সম্ভবত সমাচারদেবের ঘুঘ্রাহাটি গ্রামে প্রাপ্ত তাম্রশাসনে উল্লিখিত চন্দ্রবর্মণকোট। জৈমস ওয়াইজ কোটালিপাড়াকে গ্রিক বিবরণীর গঙ্গারিডাই রাষ্ট্রের রাজধানী বলে মনে করেছিলেন। ছয়টি তাম্রশাসনে তিনজন স্বাধীন রাজার নাম পাওয়া যায়: গোপচন্দ্র, ধর্মাদিত্য এবং সমাচারদেব। কুরপালা গ্রামে আবিষ্কৃত স্বর্ণমুদ্রা এবং তাম্রফলকগুলি সুচিত করে যে, এই রাজারা মহারাজাধিরাজ, নৃপাধিরাজ, অধিমহারাজ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন এবং কোটালিপাড়া তাদের শাসনকেন্দ্র ছিল। কোটালিপাড়া দুর্গ প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হলেও, এর প্রাচীন প্রতিরক্ষা পরিখা এখনো দৃশ্যমান। এছাড়াও, গুপ্ত সম্রাট দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এবং স্কন্ধ গুপ্তের কয়েকটি স্বর্ণমুদ্রা ১৯০৮ সালে কোটালিপাড়ায় আবিষ্কৃত হয়। ছয় শতকে ‘নব্যাবকাশিকা’ নামে পরিচিত এই অঞ্চল সমৃদ্ধ জনপদ ও নৌবাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল।
ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা:
কোটালিপাড়া উপজেলা ২২°৫২´ থেকে ২৩°০৮´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৯°৫৫´ থেকে ৮৯°০৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবস্থিত। এর আয়তন ৩৫৫.৯০ বর্গ কিলোমিটার। ঘাঘর, বিশারকন্দা-বাগদা, চাটখালী এবং শৈলদাহ নদী এই উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী এখানকার জনসংখ্যা ছিল ২৩০৪৯৩ এবং ২০১১ সালের হিসেবে এটি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অর্থনীতি ও কৃষি:
কোটালিপাড়ার জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি। ধান, গম, চীনাবাদাম, মেসতা এখানে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হয়। উল্লেখযোগ্য কুটিরশিল্পগুলির মধ্যে রয়েছে স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, বুননশিল্প ইত্যাদি। বাঘিয়ার বিল এলাকায় পিট কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য:
শিক্ষার হার তুলনামূলকভাবে কম হলেও, কোটালিপাড়ায় বেশ কয়েকটি কলেজ, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। উপজেলায় একটি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতাল ও অন্যান্য বেসরকারী হাসপাতাল আছে।
ঐতিহাসিক ঘটনা:
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে কোটালিপাড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নৃশংসতার শিকার হয়েছিল এ অঞ্চল।
উপসংহার:
কোটালিপাড়া ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ একটি অঞ্চল যা বর্তমানে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে। ঐতিহ্যের সাথে উন্নয়নকে সমন্বয় করে কোটালিপাড়াকে আরও সমৃদ্ধ করা সম্ভব।