পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কোচবিহার জেলা রাজ্যের একটি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে সমৃদ্ধ অঞ্চল। এই জেলাটির সদর কোচবিহার শহর। আয়তনের দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের ত্রয়োদশ এবং জনসংখ্যার দিক থেকে ষোড়শ বৃহত্তম জেলা। কোচবিহারের উত্তরে আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ি, দক্ষিণে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগ এবং পূর্বে অসমের ধুবড়ী জেলা অবস্থিত।
ঐতিহাসিকভাবে, কোচবিহার বৃহত্তর কামরূপ রাজ্যের অংশ ছিল। ১৭৭২ সালে কোচবিহার রাজ্য ব্রিটিশ ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। ভুটানের সাথে সংঘর্ষের পর ওয়ারেন হেস্টিংসের সাথে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হয়। ১৭৭৩ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে চুক্তির মাধ্যমে রাজ্যের নাম হয় ‘কোচবিহার’ এবং রাজধানীর নাম হয় ‘বিহার ফোর্ট’। ‘কোচবিহার’ শব্দের অর্থ ‘কোচ জাতির বাসস্থান’। ১৯৪৯ সালের ২৮শে আগস্ট, মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ ভূপবাহাদুর রাজ্যটিকে ভারত অধিরাজ্যের কাছে হস্তান্তর করেন। ১৯৫০ সালে কোচবিহার পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলায় পরিণত হয়।
কোচবিহারের ভূপ্রকৃতি সমতল, তবে উঁচু-নিচু। বর্ষাকালে নদীগুলোর বন্যা হয়। শীতলকুচি ব্লকের লালবাজার উচ্চভূমি অঞ্চল এবং দিনহাটা মহকুমা নিম্নভূমি অঞ্চল। তিস্তা, জলঢাকা, তোর্ষা, কালজানি, রায়ডাক, এবং গদাধর হল কোচবিহারের প্রধান নদীগুলি। এই নদীগুলি উত্তর-পশ্চিম থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে প্রবেশ করে এবং শেষে ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে মিলিত হয়। এছাড়াও অনেক ঝিল রয়েছে, যেমন ভেরভেরি, চম্পাগুড়ি, সুকানিম, সকজল, সিতল, পানিগ্রাম, জগৎবের।
জলবায়ু অতিরিক্ত আর্দ্র এবং মধ্যম উষ্ণ। মার্চ থেকে মে গ্রীষ্মকাল এবং নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শীতকাল। জুন থেকে সেপ্টেম্বর বর্ষাকাল। গড় বৃষ্টিপাত 2,500-3,200 মিলিমিটার। মৃত্তিকা পাললিক প্রকৃতির, বেশিরভাগ আলগা বালিমাটি।
কোচবিহারের জনসংখ্যা (২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী) ২৮,১৯,০৮৬ জন। ভাষার দিক থেকে, ৯৮.১১% বাংলা, ১.৩৮% হিন্দি এবং ০.৫% অন্যান্য ভাষা ব্যবহার করে। উল্লেখযোগ্য সংস্কৃতি হলো ভাওয়াইয়া লোকসংঙ্গীত এবং বিষহরা পালাগান।
পরিবহনের জন্য জাতীয় সড়ক ৩১, রেলপথ এবং কোচবিহার বিমানবন্দর রয়েছে। নিউ কোচবিহার প্রধান রেলওয়ে স্টেশন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় এবং স্কুল রয়েছে। প্রশাসনিকভাবে, কোচবিহার জেলা পাঁচটি মহকুমা এবং ১২টি সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত।