বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড কৃষি। কৃষিকাজকে সহজ, দ্রুত ও লাভজনক করার জন্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ভূমিকা অপরিসীম। ১৯৬০-এর দশকের শেষভাগ ও ৭০-এর দশকের শুরুতে সবুজ বিপ্লবের অংশ হিসেবে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু হয়। উচ্চ ফলনশীল বীজ, উন্নত সেচ ব্যবস্থা এবং যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য হ্রাস করাই ছিল মূল লক্ষ্য। সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং দাতাদের সহায়তায় ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, কম্বাইন হারভেস্টার ইত্যাদি আমদানি ও বিতরণ করা হয়। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)-এর প্রতিষ্ঠা আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি গ্রহণে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বিএডিসি যন্ত্রপাতি আমদানি, ভর্তুকি প্রদান এবং ঋণ সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
বর্তমানে, ট্রাক্টর, কম্বাইন হারভেস্টার, স্প্রেয়ার, প্ল্যান্টার, থ্রেশার, বেলার, রিপার, ফর্কলিফ্ট, ব্যাচ ড্রায়ার, হাইড্রো টিলার, এবং রাইস ট্রান্সপ্লান্টার সহ অনেক ধরনের আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রগুলি চাষ, বপন, ফসল কাটা, রাসায়নিক প্রয়োগ, শস্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়, যা উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, শ্রম কমায় এবং খরচ সাশ্রয় করে। GPS-ভিত্তিক নির্দেশিকা ব্যবস্থা, সেন্সর প্রযুক্তি এবং অন্যান্য উন্নত বৈশিষ্ট্য আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিকে আরও দক্ষ ও কার্যকর করে তুলেছে।
তবে, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। যেমন, উচ্চ ব্যয়, প্রযুক্তিগত দক্ষতার প্রয়োজন, পরিবেশগত প্রভাব (মাটির ক্ষয়, রাসায়নিক দূষণ, গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন), শ্রম ক্ষয়, প্রযুক্তি নির্ভরতা ইত্যাদি। ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার সবসময়ই সহজ না। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থা এই নেতিবাচক দিকগুলো মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, যেমন ভর্তুকি, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা ইত্যাদি।