বাংলাদেশের প্লে-ব্যাক গানের অমিত্র সম্রাট এন্ড্রু কিশোর (১৯৫৫-২০২০): এক অম্লান স্মৃতি
১৯৫৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহণ করেন এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। তার পিতা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মাতা মিনু বাড়ৈ। তার মায়ের প্রিয় শিল্পী ছিলেন কিশোর কুমার, যার নামানুসারে ছেলের নাম রাখা হয় 'কিশোর'। মাতার উৎসাহেই সংগীত জগতে পদার্পণ করেন এন্ড্রু কিশোর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করার সময় তিনি ৬ বছর বয়স থেকে আব্দুল আজিজ বাচ্চুর কাছে সংগীত শিক্ষা গ্রহণ করেন।
১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বেতারের প্রতিভা অন্বেষণে দেবু ভট্টাচার্য রচিত ‘সোহেলি ও সোহেলি’ গান গেয়ে তিনি শ্রোতাদের মন জয় করেন। এরপর থেকে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুল সংগীত, লোকসংগীত, আধুনিক গান ও দেশাত্মবোধক গান গাওয়ার মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশের সংগীত জগতে নিজের অবস্থান তৈরি করেন।
একই বছরে তিনি ‘মেইল ট্রেন’ চলচ্চিত্রে আলম খানের সুরে ‘অচিন পুরের রাজকুমারী’ গান গেয়ে প্লে-ব্যাক গায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন। ১৯৭৯ সালের ‘প্রতীজ্ঞা’ চলচ্চিত্রের ‘এক চোর যায় চলে’ গান তাকে অসাধারণ জনপ্রিয়তা এনে দেয়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ‘ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে’, ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘ভালোবেসে গেলাম শুধু’ প্রভৃতি গানে তিনি অমর হয়ে আছেন।
আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও পাঁচবার বাচসাস পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন এন্ড্রু কিশোর। ১৯৮৮-২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি তিনবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার পেয়েছিলেন।
১৯৮৭ সালে তিনি ‘প্রবাহ’ নামে একটি বিজ্ঞাপন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। তার স্ত্রীর নাম লিপিকা এন্ড্রু, কন্যার নাম মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা ও পুত্রের নাম জয় এন্ড্রু সপ্তক। পনের হাজারেরও অধিক গান গেয়ে শ্রোতাদের হৃদয়ে বাস করেন এন্ড্রু কিশোর।
২০১৮ সালে নন-হজকিন লিম্ফোমা নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে সিঙ্গাপুরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে দেশে ফিরে ২০২০ সালের ৬ই জুলাই ৬৪ বছর বয়সে রাজশাহীতে মৃত্যুবরণ করেন। এন্ড্রু কিশোরের মৃত্যু বাংলাদেশের সংগীত জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি বয়ে আনে।