কানাডার অর্থনীতি: উন্নত ও বহুমুখী
কানাডা বিশ্বের অগ্রণী অর্থনীতি সম্পন্ন দেশগুলির অন্যতম। ২০২৪ সালের হিসাবে, এটি বিশ্বের নবম বৃহত্তম অর্থনীতি, যার মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রায় ২.১১৭ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। একটি উন্নত মিশ্র অর্থনীতি হিসেবে, কানাডার অর্থনীতি ব্যাপকভাবে বিশ্বায়িত, যার প্রমাণ উচ্চ মাত্রার আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। ২০২১ সালে, কানাডার পণ্য ও সেবা বাণিজ্য ছিল ২.০১৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কানাডার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ দিক:
- **সেবা খাতের আধিপত্য:** কানাডার অর্থনীতির প্রায় তিন চতুর্থাংশ সেবা খাতের উপর নির্ভরশীল।
- **প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাধান্য:** কাঠ, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম, সোনা, নিকেল, জ্ঞিঙ্ক প্রভৃতি প্রাকৃতিক সম্পদের রপ্তানি কানাডার অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- **মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সম্পর্ক:** কানাডার অধিকাংশ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে হয়।
- **উচ্চ মানের জীবনযাত্রা:** উচ্চ মাথাপিছু আয় ও শক্তিশালী সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা কানাডাকে উচ্চ মানের জীবনযাত্রার দেশ করে তুলেছে।
- **উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি:** কানাডার অর্থনীতি উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়।
- **ব্যবসায়িক স্বাধীনতা:** কানাডায় ব্যবসায়িক স্বাধীনতা বেশ উচ্চ মাত্রায় রয়েছে।
কানাডার অর্থনীতির ইতিহাস:
বিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে কানাডার উৎপাদন, খনন ও সেবা খাতের বিকাশ দেশটিকে প্রধানত গ্রামীণ অর্থনীতি থেকে শহরাঞ্চল, শিল্পায়িত অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিস্তৃত কল্যাণকর ব্যবস্থার বিকাশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসমতা নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
কানাডা-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক:
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে কানাডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬৫ সালে অটোমোটিভ পণ্য বাণিজ্য চুক্তি মোটরযান উৎপাদন শিল্পে বাণিজ্যের জন্য কানাডার সীমান্ত উন্মুক্ত করে। ১৯৮৮ সালের কানাডা-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের মধ্যে শুল্ক অপসারণ করে। ১৯৯৪ সালে উত্তর আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (NAFTA) মেক্সিকোকেও এই মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করে।
প্রাকৃতিক সম্পদ ও টেকসই উন্নয়ন:
কানাডা বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের উল্লেখযোগ্য উৎপাদনকারী। তবে প্রাকৃতিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অর্থনৈতিক সূচক:
কানাডার অর্থনীতির কর্মক্ষমতা পরিমাপের জন্য উৎপাদনশীলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। ২০০২ সাল থেকে বহু-কারক উৎপাদনশীলতা (MFP) বৃদ্ধি দুর্বল হয়েছে। উদ্ভাবন বৃদ্ধি ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ব্যবধান হ্রাস করার মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।
কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Bank of Canada):
কানাডার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব মুদ্রানীতি পরিচালনা করে মুদ্রার মূল্য সংরক্ষণ করা। এর জন্য মুদ্রাস্ফীতি কম এবং স্থিতিশীল রাখার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
সেবা খাত, উৎপাদন খাত ও প্রাকৃতিক সম্পদ:
কানাডার অর্থনীতির বৃহৎ অংশ সেবা খাত দ্বারা গঠিত। তবে উৎপাদন খাত এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উৎপাদন খাতের গুরুত্ব সময়ের সাথে সাথে হ্রাস পেয়েছে, তবে এটি এখনও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও বাণিজ্য চুক্তি:
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কানাডার অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কানাডা বিভিন্ন দেশের সাথে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করেছে।
সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
কানাডার অর্থনীতিও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব অনুভব করেছে। গৃহস্থালী ঋণ এবং বাসস্থান বাজারের অতি উত্তাপ সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে।