কাচাথিভু দ্বীপ: একটি বিতর্কিত ইতিহাস
ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যবর্তী পাক প্রণালীতে অবস্থিত কাচাথিভু দ্বীপ বহু বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে বিবাদের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে আছে। এই ছোট্ট জনমানবহীন দ্বীপটি নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক, আইনি লড়াই এবং জনমতের উত্তেজনা বহুবার দেখা গেছে।
ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য:
কাচাথিভু দ্বীপ পাক প্রণালীতে অবস্থিত। ভারতের রামেশ্বরম থেকে প্রায় ৩৩ কিমি উত্তর-পূর্বে এবং শ্রীলঙ্কার জাফনা থেকে ৬২ কিমি দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় ২৮৫ একর। দ্বীপটিতে কোনও স্থায়ী জনবসতি নেই, তবে তামিলনাড়ু এবং শ্রীলঙ্কার মৎস্যজীবীরা ঐতিহাসিকভাবে মাছ ধরার জন্য এটি ব্যবহার করে আসছে।
ঐতিহাসিক পটভূমি:
কাচাথিভু দ্বীপের ইতিহাস জটিল। দীর্ঘকাল ধরে এই দ্বীপ রামানাদ রাজবংশের অধীনে ছিল। ১৭৬৭ সালে ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই দ্বীপ ইজারা নেয়। ব্রিটিশ শাসনের সময় এটি মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সির অংশ হয়ে যায়। ১৯২১ সালে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে মৎস্যজীবীদের সীমান্ত নিয়ে বৈঠক হয়।
১৯৭৪ সালের চুক্তি ও বিতর্ক:
১৯৭৪ সালে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও শ্রীলঙ্কার তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিরিমাভো বন্দরনায়েকের মধ্যে একটি দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে কাচাথিভু দ্বীপ শ্রীলঙ্কাকে হস্তান্তর করা হয়। এই চুক্তি দুই দেশের জলসীমাও স্পষ্ট করে। তবে এই চুক্তির পর থেকেই দ্বীপটির মালিকানা নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দেয়। ভারতীয় মৎস্যজীবীরা শ্রীলঙ্কার কর্তৃপক্ষের দ্বারা উৎপীড়নের অভিযোগ করে আসছে।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:
সম্প্রতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কাচাথিভু দ্বীপ ইস্যুতে কংগ্রেসকে কটাক্ষ করেছেন, ১৯৭৪ সালের চুক্তিকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তামিলনাড়ুর রাজনীতিবিদরাও কাচাথিভু ফেরত নেওয়ার দাবি করে আসছেন। এই দ্বীপটি ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলছে এবং ভৌগোলিক রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইনি দিক:
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট কাচাথিভু দ্বীপের মালিকানা নিয়ে বিভিন্ন মামলা বিচার করেছে।
উপসংহার:
কাচাথিভু দ্বীপ একটি জটিল এবং বহুমাত্রিক ইস্যু। এর ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, রাজনৈতিক গুরুত্ব এবং আইনি দিকগুলি একত্রিতভাবে এই দ্বীপকে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সম্পর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রাখছে। আগামীতে এই দ্বীপের ভবিষ্যৎ ও এর প্রভাব নিয়ে আরও ব্যাপক আলোচনা এবং সমাধানের প্রয়োজন।