করাচি: পাকিস্তানের হৃৎপিণ্ড
পাকিস্তানের সিন্ধু প্রদেশের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর করাচি, দেশটির অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। বিশ্বের পঞ্চম জনবহুল শহর হিসেবে খ্যাতিমান করাচির ইতিহাস সমৃদ্ধ ও রহস্যময়। আরব সাগরের তীরে অবস্থিত এই শহরটি শতাব্দী ধরে বহু সভ্যতার সাক্ষী হয়েছে। গ্রীকদের বর্ণনা অনুযায়ী, 'বারবারিকন' নামক সমুদ্রবন্দর এখানেই অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়।
প্রাচীনকালে দেবল নামে পরিচিত করাচি অঞ্চলটি বৌদ্ধ রাজ্য, হিন্দু রাজবংশ এবং মুঘলদের শাসনের অধীনে ছিল। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিম সিন্ধু জয় করেন এবং করাচি অঞ্চলটি আরবদের অধীনে আসে। ১৮৩৯ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি করাচি দখল করে এবং ১৮৪৩ সালে এটি ব্রিটিশ ভারতের অংশ হয়ে ওঠে। ব্রিটিশরা করাচি বন্দর স্থাপন করে এবং রেলপথের উন্নয়ন করে, যা শহরের অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে।
পাকিস্তানের স্বাধীনতার পর, করাচি দেশটির অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। জিন্নাহ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, বন্দর করাচি এবং বন্দর বিন কাসিম শহরের অর্থনৈতিক গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। ১৯৬০ ও ৭০-এর দশকে রাতের জীবনের জন্য এটি ‘বাতির শহর’ নামে পরিচিতি পায়। তবে, ৮০-এর দশকের সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধের সময়, অস্ত্রের চালান ও নৃগোষ্ঠী সংঘর্ষের ফলে করাচি সহিংসতার শিকার হয়। তবুও, করাচি আজও পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্প, বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র।
জনসংখ্যার দিক থেকে করাচি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় শহর। এখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম ও ভাষার মানুষ বসবাস করে, যা শহরটিকে একটি অনন্য বৈচিত্র্যময় পরিবেশ প্রদান করে। করাচির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা এবং গতিশীল অর্থনীতি এটিকে একটি আকর্ষণীয় শহর হিসেবে গড়ে তুলেছে। তবে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অপরাধের হার নিয়ন্ত্রণে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। করাচির ভবিষ্যৎ উন্নয়ন এর সামনে নতুন নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করবে বলে আশা করা যায়।