অধ্যাপক এম. ওসমান গণি: বাংলাদেশের শিক্ষা ও বিজ্ঞানের এক অগ্রদূত
অধ্যাপক এম. ওসমান গণি (১ মার্চ ১৯১২ - ২১ জুলাই ১৯৮৯) ছিলেন বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী। তিনি শুধুমাত্র একজন গবেষক ছিলেন না, বরং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে ও উচ্চশিক্ষার উন্নয়নেও অসামান্য অবদান রেখেছেন। তার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলার করিমগঞ্জ উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের বৈরাটিয়াপাড়া গ্রামে। পিতা হাজী মোঃ দরবার আলী এবং মাতা মকবুলা বেগম।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা গ্রহণের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৩৫ সালে প্রথম ভারতীয় মুসলমান হিসেবে প্রথম শ্রেণীতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৩৮ সালে কৃষি রসায়নে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
১৯৪০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগের লেকচারার হিসেবে যোগদানের মাধ্যমে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পরবর্তীতে তিনি বাংলার সরকারি কৃষি রসায়নবিদ, পূর্ব পাকিস্তান সরকারের কৃষি বিভাগে কর্মরত ছিলেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে তিনি মৃত্তিকা বিভাগের অধ্যাপক ও প্রধান এবং পরে ভূ-বিজ্ঞান বিভাগেরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৬১ থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বর্তমান বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়) প্রথম উপাচার্য ছিলেন। ১৯৬৩ থেকে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি পাকিস্তান একাডেমি অব সায়েন্সেসের সহকারী (১৯৫৪) এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের সভাপতি (১৯৭৬) ছিলেন। ১৯৭৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
মৃত্তিকা বিজ্ঞান ও শিক্ষায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পাকিস্তান সরকারের ‘সিতারা-ই-কায়েদ-ই-আজম’ (১৯৫৯) ও ‘সিতারা-ই-পাকিস্তান’ (১৯৬৪) খেতাব লাভ করেন। নর্দার্ন কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.এসসি ডিগ্রি (১৯৬৭) প্রদান করে। ওসমান গণি ১৯৮৯ সালের ২১ জুলাই ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। তার সম্মানে গুরুদয়াল কলেজের একটি ছাত্রাবাসের নামকরণ করা হয়েছে "ড. এম ওসমান গণি ছাত্রাবাস"।