ওষুধ

ওষুধ: জীবন ও মৃত্যুর মাঝামাঝি

মানব সভ্যতার ইতিহাসের সাথে ওষুধের এক অঙ্গাঙ্গি সম্পর্ক। প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ রোগ নিরাময় ও সুস্থতা বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করে আসছে। ঔষধের উৎপত্তি ভেষজ চিকিৎসা থেকে উৎসারিত হলেও আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে ওষুধের ধরন, উৎপাদন এবং ব্যবহার পরিবর্তিত হয়েছে।

ওষুধ কি?

ওষুধ হলো এমন রাসায়নিক দ্রব্য যা প্রাণিদেহের স্বাভাবিক ক্রিয়া প্রভাবিত করে এবং যা দ্বারা রোগ নাশ হয় বা প্রতিকার হয়, বা পীড়া ও ক্লেশ নিবারণ হয়। এই সংজ্ঞা ভেষজ ঔষধকেও গ্রহণ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FDA) ওষুধের সংজ্ঞায় রোগ নির্ণয়, আরোগ্য, উপশম, প্রতিকার এবং প্রতিরোধে ব্যবহৃত দ্রব্যকে ওষুধ হিসেবে নির্দেশ করে। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এতটা কঠোর সংজ্ঞা দেয় না। WHO অনুযায়ী, ‘ঔষধ’ শব্দটির ব্যবহার প্রসঙ্গভেদে ভিন্ন হতে পারে।

ঔষধের ইতিহাস

প্রাচীন সভ্যতায়, ভেষজ ঔষধ রোগ চিকিৎসার প্রধান মাধ্যম ছিল। আয়ুর্বেদ, ঐতিহ্যবাহী চীনা ঔষধ ইত্যাদি প্রাচীন ঔষধ ব্যবস্থা আজও প্রাসঙ্গিক। ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে বাংলাদেশে ‘ড্রাগ অ্যাক্ট’ পাস করা হয়, যা আজও কার্যকর। ‘Drug’ শব্দটির উৎপত্তি প্রাচীন ফরাসি শব্দ ‘drogue’ থেকে হয়েছে বলে মনে করা হয়।

ঔষধের প্রকারভেদ

ওষুধ মূলত দুই প্রকার: থেরাপিউটিক (রোগনিরাময়কারী) এবং প্রোফাইলেকটিক (প্রতিরোধক)। অনেক ওষুধ একইসাথে এই দুই ধরণের কাজে ব্যবহৃত হয়। আধুনিক ঔষধ বিজ্ঞানে অনেক নতুন ওষুধ উদ্ভাবিত হচ্ছে, যেমন: অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ, ক্যান্সার বিরোধী ওষুধ ইত্যাদি।

অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ

এফডিএ অনুমোদিত অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ভাইরাল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। এই ওষুধগুলো ভাইরাসের জীবনচক্রের বিভিন্ন ধাপে কার্যকর হয়। তবে ভাইরাসের জিনোটাইপের পরিবর্তনের কারণে ওষুধের প্রতিরোধ সৃষ্টি হতে পারে, যা একটি প্রধান চ্যালেঞ্জ।

ওষুধের দুর্ব্যবহার

ওষুধের দুর্ব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা। অনেকে ওষুধ বিনোদনের জন্য ব্যবহার করে, যা মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি সৃষ্টি করে। ওষুধ নিয়ন্ত্রণ এবং জাতিসংঘের সিংগেল কনভেনশন অফ নারকোটিক ড্রাগস এবং কনভেনশন অফ সাইকোট্রপিক সাবস্টানসেস এর মাধ্যমে ওষুধের দুর্ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

সতর্কতা:

ওষুধ সর্বদা ডাক্তারের পরামর্শ ক্রমে গ্রহণ করা উচিত। যেকোনো ওষুধের অপব্যবহার গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে।

মূল তথ্যাবলী:

  • ওষুধ হলো রাসায়নিক দ্রব্য যা শারীরিক ক্রিয়া প্রভাবিত করে।
  • ওষুধের প্রধান দুই প্রকার: থেরাপিউটিক ও প্রোফাইলেকটিক।
  • ১৯৪০ সালে বাংলাদেশে ড্রাগ অ্যাক্ট কার্যকর হয়।
  • অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ ভাইরাল সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়।
  • ওষুধের অপব্যবহার একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক সমস্যা।