ওয়াজেদ আলী

ওয়াজেদ আলী: একজন সাংবাদিক ও সাহিত্যিকের জীবনযাত্রা

মোহাম্মদ ওয়াজেদ আলী (১৮৯৬-১৯৫৪) বাংলা সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক। ১৮৯৬ সালের ২৮ ভাদ্রে সাতক্ষীরা জেলার বাঁশদহ গ্রামে তাঁর জন্ম। পিতা মুনশি মোহাম্মদ ইব্রাহিম ছিলেন একজন পল্লি চিকিৎসক। পিতার ডাক্তারখানায় সংবাদপত্র পড়া ও নানা বিতর্কের প্রভাবে ওয়াজেদ আলীর মধ্যে সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহ গড়ে ওঠে।

শিক্ষাজীবন শুরু হয় বাঁশদহের মধ্য ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে। বাবুলিয়া উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে বৃত্তিসহ এন্ট্রান্স পাস করে কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু মওলানা আকরাম খাঁর প্রভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে কলেজ ত্যাগ করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকতা পেশায় যোগদান করেন। ১৯২০ থেকে ১৯৩৫ সাল পর্যন্ত কলকাতায় মুসলিম মালিকানাধীন অনেক পত্রিকা সম্পাদনা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: মোহাম্মদী, নবযুগ, সেবক, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, The Musalman, খাদেম, সওগাত, সহচর, বুলবুল এবং সাম্যবাদী।

ওয়াজেদ আলী প্রাঞ্জল ভাষায় প্রবন্ধ রচনার জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। উন্নতমানের জীবনী, নকশা, সম্পাদকীয় নিবন্ধ রচনা করে তিনি সুনাম অর্জন করেন। দুইশতাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা করলেও তাঁর জীবদ্দশায় খুব কম গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। মোট আটটি গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মরুভাস্কর এবং স্মার্ণানন্দিনী। বাংলা একাডেমী সম্প্রতি তাঁর রচনাবলীর অংশবিশেষ দুই খন্ডে প্রকাশ করেছে। তিনি প্রথম দিকে ইংরেজিতেও কিছু প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন।

ওয়াজেদ আলী মুসলিম কৃষ্টি ও সমাজজীবনের একজন ব্যাখ্যাকার এবং একজন আদর্শবাদী সাহিত্যিক ছিলেন। সরকারি চাকরি পরিত্যাগ করে সাংবাদিকতা ও সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। মুসলিম সমাজের দোষত্রুটি, নতুন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সমাজ ও জীবন বিকাশের ধারা এবং ভাষা ও সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি নিয়ে তিনি অনেক মূল্যবান প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি যুক্তিবাদী ও পরিচ্ছন্ন চিন্তার অধিকারী ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর তাঁর মৃত্যু হয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • ওয়াজেদ আলী ছিলেন একজন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
  • তিনি প্রাঞ্জল ভাষায় প্রবন্ধ রচনার জন্য পরিচিত ছিলেন।
  • তিনি কলকাতায় মুসলিম মালিকানাধীন অনেক পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন।
  • বাংলা একাডেমী তাঁর রচনাবলীর অংশবিশেষ প্রকাশ করেছে।
  • তিনি মুসলিম সমাজ ও সংস্কৃতির একজন ব্যাখ্যাকার ছিলেন।