উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী: বাংলা শিশুসাহিত্যের অমিত অবদান

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (১২ মে ১৮৬৩ - ২০ ডিসেম্বর ১৯১৫) ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের এক অগ্রদূত এবং বাংলা ছাপাখানার অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে লেখক, চিত্রশিল্পী, প্রকাশক, জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক ও সুরকার ছিলেন। তার সৃষ্টি ‘গুপী-গাইন-বাঘা-বাইন’, ‘টুনটুনির বই’ ইত্যাদি এখনও বাংলা ভাষার অমূল্য সম্পদ। ‘সন্দেশ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা তিনি, যা পরবর্তীতে তার পুত্র সুকুমার রায় এবং পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন।

ময়মনসিংহ জেলার (বর্তমান কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি উপজেলার মসূয়া গ্রাম) এক সম্ভ্রান্ত দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন উপেন্দ্রকিশোর। তার পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন রায়। পাঁচ বছর বয়সে তাঁকে দত্তক নেন আত্মীয় জমিদার হরিকিশোর রায়চৌধুরী এবং নতুন নাম রাখেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী। তার পিতা কালীনাথ রায় ছিলেন আরবি, ফারসি ও সংস্কৃত ভাষার পণ্ডিত। মেধাবী ছাত্র হলেও, তাঁর ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি ছিল অধিক আগ্রহ। ময়মনসিংহ জিলা স্কুল থেকে বৃত্তি নিয়ে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন।

বিএ পাস করার পর তিনি ছবি আঁকা শুরু করেন এবং ব্রাহ্ম সমাজের সদস্য হন। ছাত্রজীবনেই তিনি শিশুদের জন্য লেখালেখি শুরু করেন। ‘সখা’, ‘সাথী’, ‘মুকুল’ প্রভৃতি পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয়। বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের কন্যা বিধুমুখীকে বিয়ে করেন।

ছোটোদের রামায়ণ বইয়ের মুদ্রণের মানে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি ১৮৮৫ সালে বিদেশ থেকে আধুনিক মুদ্রণযন্ত্র আমদানি করে ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ নামে নিজের ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং-এ উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন এবং এ বিষয়ে ব্রিটিশ পেনরোজ অ্যানুয়ালেও তার লেখা প্রকাশিত হয়।

উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী ১৯১৫ সালের ২০ ডিসেম্বর ৫২ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন। তার অবদান বাংলা শিশুসাহিত্য ও মুদ্রণশিল্পে অনন্য ও চিরস্মরণীয়।

মূল তথ্যাবলী:

  • উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী বাংলা শিশুসাহিত্যের এক অগ্রদূত ছিলেন।
  • তিনি বাংলা ছাপাখানার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
  • ‘গুপী-গাইন-বাঘা-বাইন’ ও ‘টুনটুনির বই’ তার বিখ্যাত সৃষ্টি।
  • ‘সন্দেশ’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা তিনি।
  • হাফটোন ব্লক প্রিন্টিং-এ তার অবদান উল্লেখযোগ্য।