আর্জেন্টিনা: দক্ষিণ আমেরিকার একটি রাষ্ট্র, যার রাজধানী বুয়েনোস আইরেস। দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণাংশে অবস্থিত এ দেশটি আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ আমেরিকার দ্বিতীয় এবং বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম রাষ্ট্র। আর্জেন্টিনার ভৌগোলিক বৈচিত্র্য অতুলনীয়; উত্তরের নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণের মেরু-উপদেশীয় অঞ্চল পর্যন্ত এর বিস্তার। রুক্ষ আন্দেস পর্বতমালা, উর্বর পাম্পাস সমভূমি, অরণ্যভূমি, মরুভূমি, তুন্দ্রাভূমি, নদনদী এবং হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ আটলান্টিক উপকূল এখানে বিদ্যমান। ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জ (আর্জেন্টিনীয়রা এগুলিকে মালবিনাস দ্বীপপুঞ্জ নামে ডাকে) ও অ্যান্টার্কটিকার একটি অংশের উপর আর্জেন্টিনার দাবী রয়েছে।
আধুনিক আর্জেন্টিনার ইতিহাস শুরু হয় ১৬শ শতকে স্পেনীয় উপনিবেশীকরণের মাধ্যমে। ১৭৭৬ সালে রিও দে লা প্লাতা উপরাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়, যার উত্তরসূরী হিসেবে আর্জেন্টিনা গঠিত হয়। ১৮১০ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা ও ১৮১৮ সালে স্পেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিজয়ের পর দেশটিতে বেশ কিছু গৃহযুদ্ধ হয়। ১৮৬১ সালে বুয়েনোস আইরেসকে রাজধানী করে অনেকগুলি অঙ্গরাজ্যের ফেডারেশন হিসেবে আর্জেন্টিনা পুনর্গঠিত হয়। ইউরোপ থেকে বিপুল সংখ্যক অভিবাসী আগমনের ফলে দেশটির সংস্কৃতি ও জনসংখ্যায় ব্যাপক পরিবর্তন আসে। ১৯শ শতকের শেষভাগ থেকে কৃষিদ্রব্য রপ্তানি শুরু করে আর্জেন্টিনা দক্ষিণ আমেরিকার প্রথম শিল্পায়নকারী দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এ মহাদেশের সবচেয়ে ধনী দেশ ছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বের ৭ম ধনী দেশে পরিণত হলেও ১৯৪০-এর দশকের পর থেকে মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব ও জাতীয় ঋণের সমস্যায় জর্জরিত হচ্ছে।
আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাসে সংঘাতের ছাপ রয়েছে। হুয়ান পেরন, দেশটির সবচেয়ে বিখ্যাত প্রেসিডেন্ট, শ্রমিকদের কাছে জনপ্রিয় হলেও একনায়কতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার জন্য পরিচিত। ১৯৫৫ সালে পতনের পর ১৯৭৬-১৯৮৩ সালের সামরিক শাসনামলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। ১৯৮৩ সালে গণতন্ত্র পুনঃস্থাপিত হলেও অর্থনৈতিক সংকট অব্যাহত থাকে। রাউল আলফোনসিন ও কার্লোস মেনেম-এর মতো নেতারা দেশটির রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। আর্জেন্টিনা বর্তমানে অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বুয়েনোস আইরেস, দক্ষিণ আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক শহর। আর্জেন্টিনার জনসংখ্যা প্রায় ৪ কোটি।