আব্দুল করিম: একজন বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ
আব্দুল করিম (১৯২২-১৯৭৩) বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯২২ সালে কুমিল্লা জেলায়। হোমনা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৩৯ সালে ম্যাট্রিক এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৪২ সালে আই.এসসি পাস করেন। পরবর্তীতে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৪৫ সালে রসায়ন শাস্ত্রে বি.এসসি (সম্মান) এবং ১৯৪৬ সালে এম.এসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৪৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৪৯ সালে ইউনেস্কো ফেলোশিপে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানে অধ্যয়ন করেন এবং ১৯৫১ সালে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন। দেশে ফিরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবপ্রতিষ্ঠিত মৃত্তিকা বিজ্ঞান বিভাগে যোগদান করেন। তিনি দেশের মৃত্তিকা সম্পদের বিভিন্ন দিক নিয়ে গবেষণা করে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ করেন। ১৯৫৭ সালে তিনি রিডার এবং ১৯৬৩ সালে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে, তিনি ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি রসায়ন বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান হিসেবে যোগদান করেন এবং কৃষি অনুষদের ডীন ও সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
আব্দুল করিমের গবেষণা কাজ মৃত্তিকা রসায়ন, পেডোলজি ও কৃষি রসায়ন ক্ষেত্রে বিস্তৃত ছিল। তিনি সিলেট বালি থেকে উন্নতমানের কাচ তৈরির পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, গ্রামীণ এলাকায় জৈবগ্যাস উৎপাদনের প্রযুক্তি উন্নয়নে অবদান রাখেন এবং চালের তুষ থেকে ভোজ্য তেল উৎপাদনের উপর গবেষণা করেন। মাটির মুক্ত আয়রন অক্সাইড নির্ণয়ে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবনের জন্য তিনি বিখ্যাত। আন্তর্জাতিক মৃত্তিকা বিজ্ঞান কংগ্রেসে তিনি বিশ্ব মৃত্তিকার একটি নতুন শ্রেণিবিন্যাস উপস্থাপন করেন।
কৃষি ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানে অবদানের জন্য তাকে ১৯৮০ সালে (মরণোত্তর) রাষ্ট্রপতি স্বর্ণপদক প্রদান করা হয়। ২২ ডিসেম্বর ১৯৭৩ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।